শচীন আর মাত্র এক ধাপ দূরে: জো রুটের সামনে এখন ইতিহাসের শীর্ষে ওঠার লড়াই

‘হারাধনের দশটি ছেলে, রইল বাকি এক’—রিকি পন্টিংকে টপকে যাওয়ার পর জো রুটের অবস্থানকে যেন এই প্রবাদটিই সবচেয়ে ভালোভাবে তুলে ধরে। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে রান তালিকায় এতদিন দুইয়ে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি পন্টিং। গত রাতেই তাকে টপকে এখন দ্বিতীয় স্থানে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং রত্ন জো রুট। সামনে এখন কেবল একজন—শচীন টেন্ডুলকার।
ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে অনুষ্ঠিত টেস্টে রুট যখন ১২০ রানে পৌঁছে যান, তখনই তিনি ছাড়িয়ে যান পন্টিংকে। পার্টি স্ট্যান্ডে থাকা ছয় হাজার দর্শক উঠে দাঁড়িয়ে মুহুর্মুহু হাততালিতে তাকে সম্মান জানান। শেষ পর্যন্ত তিনি থামেন ১৫০ রানে। সাজঘরে ফেরার সময়েও দর্শকদের অভিবাদনের জবাব দিয়ে ফিরেছেন রুট।
এই ইনিংসের পরই প্রশ্নটা উঠে এসেছে—শচীনের রেকর্ড ছুঁতে বা ছাড়িয়ে যেতে রুটের কত সময় লাগবে?
রুট নিজে বরাবরই বলে এসেছেন, ব্যক্তিগত মাইলফলক নয়, দলীয় সাফল্যই তাকে বেশি টানে। মুলতানে গত বছর তিনি বলেছিলেন, "আমি কখনোই নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করি না, কারণ সেটা না পূরণ হলে মনে হয় ব্যর্থ হয়েছি। এই খেলা এমনিতেই তো ব্যর্থতায় ভরা।"
তবু বাস্তবতা বলছে, ১৩,৪০৯ রানে দাঁড়িয়ে থাকা রুট আর শচীনের ১৫,৯২১ রানের মধ্যে ব্যবধান এখন মাত্র ২,৫১২। এবং রুটের বর্তমান ফর্ম ও ফিটনেস বিচার করলে, এই ব্যবধানটুকু অতিক্রম করা তার জন্য অসম্ভব কিছু নয়।
২০১২ সালে নাগপুরে টেস্ট অভিষেকের পর থেকে ইংল্যান্ড ১৫৯টি টেস্ট খেলেছে, যার ১৫৭টিতেই খেলেছেন রুট। যে দুটি ম্যাচ মিস করেছেন, তার একটি পিতৃত্বকালীন ছুটিতে, আরেকটি দলে জায়গা হারিয়ে। কিন্তু চোটের কারণে আজ পর্যন্ত একটি ম্যাচও মিস করেননি তিনি। ফিটনেসই তার ধারাবাহিকতার মূল চাবিকাঠি।
তাতে যোগ হয়েছে রানের ধারাবাহিকতা। শেষ ৪০ টেস্টে তার গড় ৫৭.৭০, করেছেন ১৩টি শতক। শেষ ৫০ ইনিংসে তার রান ২,৫৫৬। এই গতিতে চললে ২০২৭ সালের মধ্যেই তিনি ছুঁয়ে ফেলতে পারেন টেন্ডুলকারের রেকর্ড।
শচীনের টেস্ট শতকের সংখ্যা ৫১। রুট ম্যানচেস্টারে যেটা করলেন, সেটা তার ক্যারিয়ারের ৩৮তম শতক, এবং শেষ দুই টেস্টে এটি তার দ্বিতীয়। সামনে রিকি পন্টিং (৪১) ও জ্যাক ক্যালিস (৪৫)-কে ছাড়িয়ে তিনিও হয়তো একসময় গিয়ে দাঁড়াবেন শচীনের কাতারে।
তবে এই সব অর্জনের মধ্যেও রুটের একটি বড় আক্ষেপ এখনও দূর হয়নি—তার ৩৮টি টেস্ট সেঞ্চুরির একটিও আসেনি অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে! আসন্ন অ্যাশেজে সেই সুযোগটি আবার পাবেন তিনি। আর যদি এবারই তা পূরণ করতে পারেন, তাহলে তার কিংবদন্তিত্ব নিয়ে আর কোনো প্রশ্নই থাকবে না।
৩৪ বছর বয়সী এই ইংলিশ ব্যাটারের চোখে এখন ২০২৭ সালের বিশ্বকাপ খেলাও রয়েছে। ক্রিকেটের প্রতি তার ভালোবাসা, শরীরের ফিটনেস এবং ব্যাটিংয়ে নিরন্তর ক্ষুধা বলছে—শচীনের রেকর্ড ভাঙা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।