শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যগ্রহণ ও সূচনা বক্তব্য শুরু হয়েছে।
মামলার অপর দুই আসামি হলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। মামুন ইতোমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী হয়েছেন।
মামলার অভিযোগ
এই মামলায় শেখ হাসিনা ও অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। অভিযোগগুলো নিম্নরূপ:
১. উসকানিমূলক বক্তব্য ও গণহত্যা
২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। এর পরপরই সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়।
এতে গুলিতে প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-জনতা নিহত হন এবং ২৫ হাজারের বেশি আহত হন।
২. ড্রোন ও মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ
শেখ হাসিনা হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নির্মূলের নির্দেশ দেন। তার এই নির্দেশ আইজিপি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে বাহিনীগুলোর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল এবং ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে হাসিনার কথোপকথনের অডিও রেকর্ড এর প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
৩. রংপুরে ছাত্র হত্যা
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করার ঘটনায় তিন আসামিকেই অভিযুক্ত করা হয়েছে।
৪. চানখাঁরপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যা
ঢাকার চানখাঁরপুলে আন্দোলনরত ছয় নিরস্ত্র জনতাকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
৫. আশুলিয়ায় আগুনে পুড়িয়ে হত্যা
আশুলিয়ায় ছয় নিরীহ নাগরিককে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায়ও তিনজনকেই অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এ মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধেই ‘সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি’ (সর্বোচ্চ দায়) অনুযায়ী অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
অতিরিক্ত মামলা ও বিচার প্রক্রিয়া
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এটি ছাড়াও আরও তিনটি মামলা বিচারাধীন।
এর মধ্যে, ২ জুলাই আদালত অবমাননার মামলায় তাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর এটাই ছিল প্রথম মামলায় দণ্ডপ্রাপ্তি।
এছাড়া আরও দুটি মামলায় তদন্ত চলমান:
হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের হত্যা-নির্যাতনের মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ: ১২ আগস্ট
গুম-খুন ও নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ: ২৪ আগস্ট