বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের যাত্রা, স্বর্ণযুগ এবং বর্তমান সংকট

বাংলাদেশে ব্যান্ড সংগীতের সূচনা হয় ১৯৭০-এর দশকে। ১৯৮০-৯০ এর দশককে বলা হয় ব্যান্ড সংগীতের স্বর্ণযুগ। এলআরবি, মাইলস, ফিডব্যাক, নগরবাউল, সোলসসহ অনেক ব্যান্ড সেই সময়ে শুধুমাত্র গান করেনি, বরং একটি প্রজন্মকে গানের উন্মাদনায় ভাসিয়েছে। তাদের গান ছিল বিদ্রোহ, প্রেম ও বাস্তবতার গল্প। আইয়ুব বাচ্চুর ‘চলো বদলে যাই’, জেমসের ‘দুঃখিনী দুঃখ করোনা’, মাইলসের ‘ফিরিয়ে দাও’—এসব গান আজও কালজয়ী।
কিন্তু আজকের দিনগুলোতে সেই গৌরব অনেকটাই হারিয়ে গেছে। নকীব খান, আইয়ুব বাচ্চু, জেমসদের উত্তরসূরিরা সেই জোয়ার ধরে রাখতে পারেননি। পুরোনো ব্যান্ডগুলোর মধ্যে মাত্র নগরবাউল নিয়মিত কনসার্টে সক্রিয়। মাইলস ব্যান্ডের প্রয়াত সদস্য শাফিন আহমেদের শূন্যতা এখনো পূরণ হয়নি। অন্য ব্যান্ডগুলো নিয়মিত কনসার্টে নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্রোতার পরিবর্তিত রুচি, ব্যান্ড ভাঙন, একক ক্যারিয়ারে আগ্রহ, মিডিয়া ও স্পন্সরের অবহেলা, এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে দলগত সংগীত চর্চার অভাবই এই সংকটের কারণ। তবে কিছু ব্যান্ড এখনও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে—নগরবাউল, অবসকিউর, সোলস, আর্টসেল, মাইলস, ওয়ারফেইজ, ডিফারেন্ট টাচ, আর্ক ইত্যাদি।
আর্ক ব্যান্ডের ভোকাল হাসান উল্লেখ করেন, অডিও ইন্ডাস্ট্রির বাজার সংকুচিত হওয়ায় পেশাদারভাবে গানে লগ্নি কমে গেছে, যা ব্যান্ড সংগীতের পতনের অন্যতম কারণ। ফিডব্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ফোয়াদ নাসের বাবু বলেন, মানুষের ভরসা এখন অনলাইনে, যেখানে গান পুরোপুরি শোনা হয় না, ফলে ব্যান্ড গানের আগের জনপ্রিয়তা কমে গেছে।
অবসকিউর ব্যান্ডের সাইদ হাসান টিপু বলেন, বর্তমান ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে আয় অতি সামান্য, যা শিল্পীদের প্রোডাকশনে সহায়তা করতে পারছে না।
বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীত তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বর্তমান সংকট কাটিয়ে নতুন প্রজন্মের হাতে গিটার তুলে দিলেই আবার সেই সুরের জোয়ার ফিরিয়ে আনা সম্ভব।