“১৩৭ বছরের হাট, কিন্তু চাষিরা এখনও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না”

বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার টাউন নোয়াপাড়ার ১৩৭ বছরের ঐতিহ্যবাহী পানের হাট দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাট। শীতের মৌসুমে হাটে একদিনে দেড় থেকে দুই কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হয়। সপ্তাহে দুই দিন—বৃহস্পতিবার ও রবিবার—হাট বসে এবং প্রতি হাটে ১৪–১৫ হাজার টাকা খাজনা আদায় করা হয়।
হাটে শুধু বাগেরহাট জেলার পাইকাররাই নয়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও ব্যবসায়ীরা ভিড় জমান। এখানে কেনা পান দেশব্যাপী ছোট ছোট হাটে বিক্রি হয়, পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করা হয়।
তবে চাষিরা এখন আর আগের মতো ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। সরজমিনে দেখা যায়, ভোর চারটায় চাষিরা ঘুম ভেঙে সাইকেল বা মাথায় গাদা করে পানের চালানি নিয়ে হাটে আসেন। দুই ঘণ্টার মধ্যে হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতা দরদাম করেন, ট্রাকে মাল তোলা হয়।
পানচাষী সরদার কামরুল ইসলাম বলেন, “পান চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু বর্তমান বাজারে ন্যায্য দাম না পেলে হয়তো অন্য কিছু করতে হবে।” মোল্লা হাট থেকে আসা রহিম শেখ যোগ করেন, “দুই পোন পান বিক্রি করলে খরচও উঠছে না। এতে পরিবার চালানো দুষ্কর।”
চাষিরা জানান, সুপারি দাম বাড়লেও পান কমে যাওয়ায় তারা লোকসান গুণছেন। মিজানুর রহমান বলেন, “এভাবে চলতে থাকলে পানচাষীরা একসময় টিকে থাকতে পারবে না।”
হাটের অবকাঠামোও মারাত্মক অবস্থায়। নেই ছাউনিঘর, বাথরুম বা বিশুদ্ধ পানি; বর্ষায় কাদা ও বৃষ্টির কারণে চলাচলও কঠিন। হাটের ইজারাদার মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, “প্রতিবছর কোটি টাকার লেনদেন হলেও হাটের কোনো উন্নয়ন হয়নি। ছাউনিগুলো জরাজীর্ণ, দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।”
ফকিরহাট ইউএনও সুমনা আইরিন বলেন, “সম্প্রতি বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। শিগগিরই সরেজমিনে গিয়ে হাট উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের চেষ্টা করা হবে।”
নোয়াপাড়ার এই শতবর্ষী পান হাট শুধু বাণিজ্যের কেন্দ্র নয়, এলাকার মানুষের গর্ব। তবে ন্যায্য দাম ও অবকাঠামোর উন্নতি না হলে ঐতিহ্যটি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।