উপেক্ষিত এক স্বাস্থ্যসমস্যা: ‘ইগলস সিনড্রোম’ নিয়ে জানুন বিস্তারিত

ঘাড়, গলা, কানে ব্যথা বা গিলতে সমস্যা হলে সাধারণত গলা ব্যথা বা টনসিলজনিত সমস্যার কথা মনে আসে। কিন্তু এসব উপসর্গের পেছনে থাকতে পারে অপেক্ষাকৃত অজানা একটি স্বাস্থ্যসমস্যা—ইগলস সিনড্রোম। অনেকটাই অবহেলিত এই জটিলতা সময়মতো শনাক্ত না হলে রোগীকে দীর্ঘদিন ভোগাতে পারে।
কী এই ইগলস সিনড্রোম?
ইগলস সিনড্রোম মূলত স্টাইলয়েড প্রসেস নামক হাড়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা স্টাইলোহাইওয়েড লিগামেন্টে ক্যালসিয়াম জমার কারণে হয়। এটি সাধারণত ৩ সেন্টিমিটারের বেশি লম্বা হলে উপসর্গ সৃষ্টি করে। এই সিনড্রোমে ঘাড় ও গলার গভীরে তীব্র ব্যথা হয়, যা ছড়িয়ে পড়ে চোয়াল, কান ও মাথায়। গলার ভেতরে কিছু আটকে থাকার অনুভূতি, খাবার গিলতে অসুবিধা এবং মাথা ঘোরালে ব্যথা বেড়ে যাওয়ার মতো উপসর্গও দেখা যায়।
উপসর্গগুলো যেভাবে দেখা দেয়:
১. গলার এক পাশে বা উভয় পাশে তীব্র ব্যথা
২. কান, চোয়াল বা মাথায় ব্যথা ছড়িয়ে পড়া
৩. খাবার গিলতে কষ্ট হওয়া
৪. গলায় কাঁটার মতো কিছু আটকে থাকার অনুভূতি
৫. মাথা ঘোরানো বা নিচু করলেই ব্যথা বেড়ে যাওয়া
ইগলস সিনড্রোমের অনেক ক্ষেত্রেই কোনো সুস্পষ্ট কারণ থাকে না। তবে কিছু নির্দিষ্ট কারণের মধ্যে রয়েছে—লিগামেন্টে ক্যালসিফিকেশন, টনসিল অপারেশনের পরবর্তী জটিলতা, বয়সজনিত হাড়ের পরিবর্তন এবং বংশগত প্রভাব।
শারীরিক পরীক্ষার পাশাপাশি মুখের ভেতর থেকে ডিজিটাল পালপেশন, এক্স-রে ও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হিসেবে ধরা হয় সিটি স্ক্যান। এতে স্পষ্টভাবে স্টাইলয়েড হাড়ের অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে।
ওষুধের মাধ্যমে:
ব্যথানাশক, স্নায়ুবিষয়ক ওষুধ, ভিটামিন থেরাপি ও ইনজেকশন পদ্ধতিতে অধিকাংশ রোগীর উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
অস্ত্রোপচার:
যেসব ক্ষেত্রে ওষুধে কাজ হয় না, সেখানে স্টাইলয়েড হাড় অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়। মুখের ভেতর দিয়ে করা অস্ত্রোপচারে বাইরে কোনো দাগ পড়ে না এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয়।
উল্লিখিত উপসর্গগুলোর মধ্যে একাধিক যদি দীর্ঘদিন ধরে থাকে এবং তার নির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে না পাওয়া যায়, তাহলে দ্রুত একজন অভিজ্ঞ নাক-কান-গলা (ইএনটি) বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
ইগলস সিনড্রোম একটি বিরল হলেও গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা। সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসার মাধ্যমে এটি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। উপসর্গগুলোকে অবহেলা না করে, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিলেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি সম্ভব।