সুনামগঞ্জে সড়ক অবরোধের পর পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতির ঘোষণা, সব বাস চলাচল বন্ধ

বাসভাড়া নিয়ে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সুবিপ্রবি) শিক্ষার্থী এবং পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে ঝগড়ার জেরে পরিবহন শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধের পর কর্মবিরিতর ডাক দিয়েছেন। এ কারণে রোববার সন্ধ্যার পর সুনামগঞ্জ থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেজাউল করিম রাত ১০টায় জানিয়েছেন, তিনদফা দাবিতে শ্রমিকেরা কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। তাই সুনামগঞ্জ থেকে সব বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। সোমবার (৪ আগস্ট) সকাল থেকে জেলায় সিএনজি অটোরিকশাও চলবে না।
তাদের তিনদফা দাবির মধ্যে রয়েছে, শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও শ্রমিকদের ওপর হামলার ঘটনার বিচার, কারাগারে থাকা শ্রমিকের মুক্তি দিতে হবে।
গতকাল রবিবার (৩ আগস্ট) সকালে সুবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাস ভাড়া নিয়ে একটি বাসের শ্রমিকের ঝগড়া হয়। এর জেরে বিকেলে দুইঘণ্টা সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক অবরোধ করেন পরিবহন শ্রমিকেরা। পরে তাঁরা কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। এরপর সুনামগঞ্জ থেকে সিলেটসহ দেশের অন্য কোথাও বাস ছেড়ে যায়নি।
সুবিপ্রবির অস্থায়ী ক্যাম্পাস সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলায় সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের পাশে সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনিস্টিউটে অবস্থিত। জেলা শহর থেকে এটির দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার।
পরিবহন শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকার রোববার সকালে জেলা শহর থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থী সিলেটগামী একটি বাসে করে ক্যাম্পাসে যান। সেখানে নামার সময় ভাড়া নিয়ে শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝগড়া হয়।
পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীরা শান্তিগঞ্জে ক্যাম্পাসে নামার সময় ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সেখানে একটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। শ্রমিকদের মারধর করে ক্যাম্পাসে আটকে রাখেন। এই ঘটনা জানাজানি হলে দোষীদের বিচার দাবিতে বিকেলে তিনটার দিকে সুনামগঞ্জ বাস টার্মিনালের সামনে সড়ক অবরোধ করেন পরিবহন শ্রমিকেরা। এ সময় সড়কের দুই দিকে যানবাহন আটকা পড়ে। ভোগান্তিতে পড়েন মানুষজন।
পরে পুলিশ গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বললে বিকাল পাঁচটার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
সুনামগঞ্জ জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুজাউল কবির বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভাড়া নিয়ে এর আগেও শ্রমিকদের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ করেছেন। শ্রমিকদের মারধর ও বাস ভাংচুর করেছেন। গতকাল রোববার তারা একজন শ্রমিককে মারধর করেন। ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা এই ঘটনার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেন।
জেলা বাস-মিনিবাস, মাইক্রবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল হক বলেন, বারবার শ্রমিকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের এ ধরণের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু শ্রমিকেরা ন্যায্য বিচার পায়নি। একটি দূর্ঘটনার জেরে দেলোয়ার হোসেন নামে আমাদের একজন শ্রমিক প্রায় পাঁচমাস ধরে জেলে আছেন। আমরা তাঁর মুক্তি চাই। এ ছাড়া আনোয়ার হোসেন নামে সিএনজিচালিত অটোরিকশার আরেক শ্রমিক হামলার শিকার হয়েছিলেন। মামলা হওয়ার পরও পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করছে না।
সুবিপ্রবির রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুর রহমান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে শান্তিগঞ্জ আসার সময় অর্ধেক ভাড়া দেওয়া নিয়ে বাসের চালকের সহকারীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ওই সহকারী একজন শিক্ষার্থীকে ধাক্কা দেন। এ নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে ঝামেলা বাঁধে। আবদুর রহমান জানান, বাসে থাকা শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন ঝগড়ায় জড়ানো বাসের চালকের সহকারী মাদকাসক্ত ছিলেন।