‘দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র’ গঠনে ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা এনসিপির, দাবি জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি

‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনের লক্ষ্যে নতুন সংবিধান, সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রীয় সংস্কারসহ ২৪ দফা রাজনৈতিক ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
গতকাল রোববার (৩ আগস্ট) ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে আয়োজিত এক সমাবেশে এ ইশতেহার ঘোষণা করেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, “ছাত্র-শ্রমিক-জনতার বিপুল আত্মত্যাগে আমরা এক ফ্যাসিবাদী শাসনকে পরাজিত করে অবিস্মরণীয় বিজয় অর্জন করেছিলাম। কিন্তু সেই বিজয়কে ব্যর্থ করে দিয়েছে আরেক ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার পুনঃউত্থান। এনসিপির জন্ম হয়েছে সেই শাসনব্যবস্থা সমূলে উৎখাত করে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরির লক্ষ্যে।”
নাহিদ ইসলাম বলেন, “১৯৭২ সালের মুজিববাদী সংবিধান, সেই সাথে বাকশালী অপশাসন, দুর্নীতি ও দুর্ভিক্ষ ছিল মানুষের মুক্তি-আকাঙ্ক্ষার প্রতি নিষ্ঠুর প্রতারণা। বাঙালি জাতীয়তাবাদের নামে জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল একমুখী, একদলীয় ও কর্তৃত্ববাদী শাসন।”
তিনি বলেন, “আজ ৫০ বছর পরও আমরা এমন একটি রাষ্ট্র তৈরি করতে পারিনি, যা গণতন্ত্র, সাম্য, মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে দাঁড়াবে।”
ঘোষিত ২৪ দফার মূল দাবি:
১. নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক সেকেন্ড রিপাবলিক গঠন।
২. জুলাই অভ্যুত্থান ও গণহত্যার সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও বিচার নিশ্চিত করা।
৩. নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রীয় জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান সংস্কার।
৪. ঔপনিবেশিক আইন বাতিল ও বিচার ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ।
৫. ডিজিটাল গভর্ন্যান্স চালু করে সরকারি সেবায় সময় ও কাগজের ব্যবহার কমানো।
৬. পুলিশ আইন যুগোপযোগী করা ও র্যাব বিলুপ্তি।
৭. গ্রাম পার্লামেন্ট গঠনের মাধ্যমে স্থানীয় শাসনে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত।
৮. গণমাধ্যমের মালিকানা কেন্দ্রীয়করণ রোধে আইনি কাঠামো।
৯. ই-হেলথ কার্ড ও ইউনিক হেলথ আইডি চালু।
১০. একীভূত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
১১. বিজ্ঞান গবেষণায় ৫০ বছর মেয়াদি প্রকল্প।
১২. ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতিসত্তার সমান মর্যাদা নিশ্চিতকরণ।
১৩. নারীর জন্য সংসদে ১০০টি সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন।
১৪. মানবকেন্দ্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা।
১৫. শিক্ষাজীবনে বেতনভুক্ত ইন্টার্নশিপ।
১৬. মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্প্রসারণ।
১৭. খাদ্য সার্বভৌমত্ব ও টেকসই কৃষি।
১৮. শ্রমিকদের জন্য স্থায়ী শ্রম কমিশন গঠন।
১৯. প্রাকৃতিক সম্পদে দেশীয় নিয়ন্ত্রণ।
২০. ভর্তুকিযুক্ত আবাসন ও ভাড়া নিয়ন্ত্রণ কাঠামো।
২১. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন।
২২. প্রবাসীদের জন্য ভোটাধিকার ও ডিজিটাল সেবা।
২৩. সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে কূটনৈতিক উদ্যোগ।
২৪. আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গঠন।
রাজনৈতিক ব্যাখ্যা ও ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি
নাহিদ ইসলাম বলেন, “গত বছরের এই দিনে আমরা শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার পতনের আহ্বান জানিয়েছিলাম। আজ আমরা সেই স্বপ্নের বাস্তবায়নের জন্য ২৪ দফা ইশতেহার নিয়ে আবারও আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “এনসিপির জন্ম, আমাদের সমস্ত শ্রম, এই নতুন বাংলাদেশের জন্য। দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র গঠনের পথে এটি আমাদের অঙ্গীকার।”