লালন আখড়াবাড়ির ঘাটে কচুরিপানার ফুলে স্বপ্নিল সৌন্দর্য

কুষ্টিয়ার লালন আখড়াবাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে চলা কালী নদীর ঘাট যেন এখন রঙের খেলা। সবুজ কচুরিপানার মাঝে সাদা, হালকা গোলাপি আর বেগুনি ফুল ফুটে যেন নদীজুড়ে এক মনোমুগ্ধকর চিত্র এঁকেছে প্রকৃতি। দেখলে মনে হয়, যেন কোনো শিল্পীর নিখুঁত তুলির টানে আঁকা ছবির মতো!
কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়া গ্রামের লালন আখড়াবাড়ির মাঠের ঠিক পাশেই নদীতে এই রূপকথার দৃশ্য তৈরি করেছে পরিচিত জলজ উদ্ভিদ, কচুরিপানা। যদিও এই ফুল সুবাস ছড়ায় না, তবে তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ স্থানীয়রা, পর্যটকরা এবং প্রকৃতিপ্রেমীরা। প্রতিদিনই শত শত মানুষ এসে ভিড় করছেন কালী নদীর ঘাটে, কেউ ক্যামেরায় বন্দি করছেন মুহূর্তগুলো, কেউ বা মোবাইলেই তুলে রাখছেন মনের ভালো লাগা।
জানা যায়, এই কচুরিপানা নদীতে কিছুদিন আগেও এতোটা বিস্তৃত ছিল না। কয়েক মাস আগে নদীর পানি ছিল পরিষ্কার, মাছ চাষও চলত নিয়মিত। তবে এখন নদীজুড়ে কচুরিপানার রাজত্ব। এর মধ্যে ফুটে থাকা ফুলগুলো নদীর রূপটাই পাল্টে দিয়েছে। শহরবাসী থেকে শুরু করে দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছেন এ সৌন্দর্য দেখতে। কেউ কেউ বিদেশ থেকেও এসেছেন মুগ্ধ হতে।
প্রকৃতি প্রেমিক ও আলোকচিত্রী তানভীর অমি বলেন, "অনেক রকম ফুলের ছবি তুলেছি, কিন্তু একসঙ্গে এত কচুরিপানার ফুল আগে কখনো দেখিনি। তাই খবর শুনেই চলে এসেছি।"
শহরের কোটপাড়া এলাকার মলি খাতুন বলেন, "আগে কচুরিপানাকে আগাছা মনে করতাম। এখন দেখছি, সেই আগাছাই প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্য হয়ে উঠেছে।"
তাঁর মতে, গ্রামাঞ্চলে কচুরিপানার ফুলকে কেউ 'হেনা', কেউবা 'কস্তুরি' ফুল নামে চেনেন।
কলেজছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, "কুষ্টিয়ার বিভিন্ন বিল-ঝিলে কচুরিপানা দেখা যায়, কিন্তু এখানে মুক্ত জলাশয়ে এভাবে ফুল ফুটে প্রকৃতি যেন নতুন সাজে সেজেছে। মনটাই ভরে যায়।"
ঢাকা থেকে আসা ভ্রমণপিপাসু জাহাঙ্গীর আলম বলেন, "কচুরিপানার এমন সৌন্দর্য চোখে না দেখলে বোঝাই যেত না।"
ছোট্ট শিশু শাফায়েত চৌধুরী তার আনন্দ চাপা রাখতে না পেরে বলে ওঠে, "জীবনে এত ফুল একসঙ্গে কখনো দেখিনি! এখানে আসতে পেরে খুবই খুশি। মন চাইছে বারবার ছবি তুলি।"
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া কার্যালয়ের উপপরিচালক সুফি মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান জানান, কচুরিপানার আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা। স্রোতহীন স্বাদু পানিতে এরা জন্মে এবং খুব দ্রুত বংশ বিস্তার করে। এ ফুল বেশিদিন টিকে না—কাণ্ড থেকে আলাদা করলে দ্রুতই ঝরে পড়ে। তবে জলাশয়ের বুকে যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণ প্রকৃতিকে করে তোলে মোহময়।
সত্যিই, লালন আখড়াবাড়ির ঘাটের কচুরিপানার এই ফুল এখন প্রকৃতির এক স্বপ্নিল উপহার হয়ে উঠেছে সকলের জন্য।
