কুড়িগ্রামে তিস্তার পানি বেড়ে বাদামে সর্বনাশ

বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বেড়ে কুড়িগ্রামের উলিপুর ও রাজারহাট উপজেলায় তিস্তার চরে তলিয়ে গেছে বাদামসহ বিভিন্ন ক্ষেত। এতে ক্ষতির মুখে পড়েন কৃষকরা। ধার-দেনা করে চাষ করা ফসল হানি হওয়ায় শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। কোথাও কোথাও তোলা হচ্ছে অপরিপক্ক বাদাম। কোথাও আশা ছেড়ে দিয়ে হতাশায় কৃষকেরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে শনিবার থেকে বাড়তে থাকে তিস্তার পানি। রোববার জেলার রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর পাড়ের চর ও নিচু এলাকায় বাদামসহ বিভিন্ন ক্ষেত পানিতে ডুবে আছে। এদিকে উলিপুর উপজেলার তিস্তা নদী বেষ্টিত দলদলিয়া ও থেতরাই ইউনিয়নের কয়েকটি কয়েকটি এলাকায় দেখা গেছে এমন দৃশ্য।
রাজারহাট উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এ বছর তিস্তা নদীর পাড়ে জেগে উঠা চরাঞ্চলে ১৭৫ হেক্টর চিনাবাদাম, ২০ হেক্টর পাট, তিন হেক্টর মরিচ ও পাঁচ হেক্টর বিভিন্ন সবজি চাষাবাদ করেছে কৃষকরা। কয়েকদিনের ভারী ও মাঝারি বৃষ্টি এবং উজানে বৃষ্টির ফলে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে নিচু চরগুলোতে প্রবেশ করে। এতে উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর পাড়ে নিচু চরাঞ্চলের ক্ষেত তলিয়ে যায়। সব চেয়ে বেশি নিমজ্জিত হয়েছে বাদাম ক্ষেত। কেউ কেউ পানিতে নেমে অপরিপক্ক বাদাম, মরিচসহ অন্যান্য ফসল তোলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হচ্ছে। তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা শঙকা প্রকাশ করছেন উজানের ঢল বাড়তে থাকলে নতুন করে অনেক ক্ষেত তলিয়ে যাবে। বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চর বিদ্যানন্দ গ্রামের কৃষক মাঈদুল ইসলাম জানান, তিনি চরের ৬ একর জমিতে চিনা বাদাম চাষ করেছেন। সবটুকু ক্ষেত তলিয়ে গেছে। একইভাবে ওই এলাকার সরিফুল ইসলামের ২ একর, আব্দুল কাদেরের ৩ একর, আব্দুল জলিলের ৫ একর, বাতেন মিয়ার ১০ একর, রহিদুল ইসলামের ১একর, সাইদুল ইসলামের দেড় একর, লতিফ মিয়ার ৪ একর, ওমর আলীর ৩ একর এবং আবুল কালামের এক একর জমির চিনাবাদাম তলিয়ে গেছে এ পানিতে। এদের অনেকে ক্ষেত থেকে বাদাম তোলার চেষ্টা করছেন। মাইদুল ইসলাম বলেন, ধার-দেনা করে ৬ একর জমিতে বাদাম চাষ দিছি। যে অবস্থা এ অবস্থায় তুললে সে বাদাম বিক্রি হবেনা। পানিতে থাকলে পচে যাবে। সে কারণে তুলে ফেলছি।
রাজারহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুরন্নাহার সাথী বলেন, হঠাৎ করে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের নামার চর কিছুটা ডুবে গেছে। কৃষকদের উঠতি বাদাম তোলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তবে পানি নামতে শুরু করেছে। তেমন ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা নেই। এদিকে উলিপুর উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে তিস্তা নদীর চরে ২৩০ হেক্টর জমিতে চিনাবাদাম, ৪০০ হেক্টর পাট, ১০ হেক্টর মুগডাল, ১০ হেক্টর মরিচ, ৫ হেক্টর জমিতে শাক-সবজি চাষ হয়েছে। এরমধ্যে কয়েকদিনের ভারী ও মাঝারি বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে ওই এলাকার বেশ কিছু ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
এ উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের চর গোড়াইপিয়ারের কৃষক লাল মিয়া, ফরিদ শেখ, আলী আকবর, নজরুল ইসলাম, হোসেন আলীসহ কয়েকজন জানান তাদের বাদাম ক্ষেত এখন পানির নিচে। তাদের কেউ কেউ পানিতে অপরিপক্ক বাদাম তোলার চেষ্টা চলাচ্ছেন। দলদলিয়া ইউনিয়নের কর্পূরা এলাকার কৃষক শুকাব্বর আলী জানান, ৫০ শতক জমিতে বাদাম চাষ করেছেন তিনি। এতে বেশ টাকা খরচ হয়েছে। ৩০ শতক জমির বাদাম ক্ষেত এখন পানির নিচে। সেগুলো তোলার চেষ্টা করছেন। তবে খরচ উঠবেনা। পাশের রশিদের চর এলাকার বাদাম চাষি আতিয়ার রহমানও বলেন একই কথা।
যদিও উলিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার চার ইউনিয়নে প্রায় দুই হেক্টর জমির চিনাবাদাম পানিতে তলিয়ে গেচে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ীর উপ পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ পর্যন্ত জেলায় তিন হেক্টর বাদাম তলিয়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে ইতোমধ্যে পানি নামতে শুরু করেছে। পানি নেমে গেলে কৃষকের তেমন ক্ষতি হবেনা।