ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন: ইশরাক হোসেনের শপথবিরোধী কর্মকাণ্ড ও রাজনৈতিক টানাপোড়েন

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সরকারের সঙ্গে বিএনপির মধ্যে টানাপোড়েন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যার প্রধান কারণ ছিল নির্বাচনের সময় নিয়ে মতভিন্নতা। ১৩ জুন লন্ডনে অধ্যাপক ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ২০২৬ সালের রমজানের আগে—ফেব্রুয়ারি প্রথমার্ধে—ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণায় বিএনপি উৎসাহিত হয় এবং বৈঠককে ‘ঐতিহাসিক ও ফলপ্রসূ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে।
তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়া নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন এখনও শপথ নেননি, কিন্তু ১৬ জুন নগর ভবনে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন এবং নিজের নামে ‘মেয়র’ উল্লেখ করে সভার নেতৃত্ব দেন, যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। এসময় নগর ভবনের সামনের অবস্থান কর্মসূচি ও তালা ঝুলিয়ে রাখায় নাগরিক সেবা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, মেয়র ইস্যুতে সরকার, বিএনপি ও ইশরাক—সবাই ‘বাড়াবাড়ি’ করেছে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ইশরাকের কর্মকাণ্ডকে ‘ক্রিমিনাল’ আখ্যায়িত করেন, যা নিয়ে ইশরাক প্রতিক্রিয়া দিয়ে তাকে ‘মূর্খ’ বলেছেন।
সরকারের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রশ্নের মুখে পড়েছে এবং এ নিয়ে ১৯ জুন উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নগর ভবন অবরোধ ও ইশরাকের কর্মকাণ্ড নিয়ে তীব্র আলোচনা হয়েছে। বিএনপিকে মেয়র পদে শপথ নেওয়ার জন্য চাপ দিতে হলে ইশরাক স্বেচ্ছায় সরে না গেলে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইশরাকের এমন কর্মকাণ্ড একক সিদ্ধান্ত নয়, বরং দলের শীর্ষ পর্যায়ের অনুমোদন ছাড়া সম্ভব নয়। সরকারকে চাপে রাখতে বিএনপি এ ইস্যু ব্যবহার করছে এবং নির্বাচন নিয়ে চাপ অব্যাহত রাখার সম্ভাবনা রয়েছে।