ত্রিশের পর বন্ধুত্বে যে পাঁচ ভুল করতে নেই

শৈশব, কৈশোর বা তারুণ্যে বন্ধুত্ব চলে একটি ধারায়। ত্রিশের পর জীবনে আসে বহু পরিবর্তন। বদলে যায় বন্ধুত্বের সম্পর্কও। ঘরে-বাইরে বাড়তে থাকা দায়িত্বের মধ্যে অনেক বন্ধুত্বই হয়ে পড়ে নিষ্প্রাণ। বেশ কিছু ভুল এর জন্য দায়ী। ত্রিশ পেরোনোর পর পরিবারের বহুমুখী দায়িত্ব কিংবা কর্মক্ষেত্রের চাপ সামলে বন্ধুর জন্য সময় বের করা নিঃসন্দেহে কঠিন। মাথায় দায়িত্বের বোঝা থাকলেও বন্ধুর জন্য মনের টান নিশ্চয়ই আছে আপনার। কিন্তু নিজের জীবনের চাপ সামলাতে গিয়ে এমন কিছু করে বসবেন না, যা বন্ধুত্বকে মলিন করে ফেলে। এমন পাঁচ ভুল সম্পর্কে জেনে নিন।
যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া
যোগাযোগ একেবারে বন্ধ করে দেবেন না। মাঝেমধ্যে খুদে বার্তা পাঠিয়ে দিন বন্ধুকে। ভালো–মন্দের খবর নিন। জানান দিন, আপনার জীবনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ, তাঁকে আপনার মনে পড়ে। পুরোনো দিনের কোনো ছোট্ট ঘটনার কথা মনে পড়লে বন্ধুকেও তা মনে করিয়ে দিতে পারেন। বন্ধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করলে তাঁর সঙ্গে সুন্দর কোনো স্মৃতি শেয়ার করতে পারেন মাঝেমধ্যে। এতেও তাঁকে জানান দেওয়া হয় যে আপনি ভোলেননি তাঁর কথা।
কণ্ঠের আবেগ না জানানো
খুদে বার্তা পাঠানোর বহু মাধ্যম আছে। কিন্তু বার্তা পাঠিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। কণ্ঠের আবেগ লিখিত বার্তায় প্রকাশ পায় না। তাই কখনো কখনো কথাও বলুন। সামনাসামনি সম্ভব না হলে ফোনেই বলুন। বন্ধুর সঙ্গে সময় না মিললে নিদেনপক্ষে ভয়েস মেসেজ বা কণ্ঠবার্তা পাঠিয়ে রাখুন।
দীর্ঘ অনুপস্থিতিকে ক্ষমা না করা
আপনার বন্ধু হয়তো নিজ থেকে দীর্ঘদিন আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তাতে কী! আপনিই নাহয় শুরু করুন। বন্ধু হয়তো ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা সামাজিক চাপে আছেন। দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে যাওয়ায় আপনাকে নিজের কষ্টের কথা হয়তো বলতেও পারছেন না। কিংবা হয়তো সব ঠিক থাকলেও তাঁর জায়গা থেকে যোগাযোগটা হয়ে উঠছে না। কারণ যেটাই হোক, অভিমানের মেঘ বাড়তে দেবেন না। মনে ক্ষোভ না রেখে নিজেই যোগাযোগ শুরু করুন। বন্ধুর জন্য এটুকু করতে পারবেন না? আপনিই নতুনভাবে আলাপ শুরু করুন। আলাপ চালিয়ে যান যেকোনো মাধ্যমে। আপনার এখনকার অনুভূতিগুলো ভাগ করে নিন বন্ধুর সঙ্গে।
বন্ধুর পরিবারকে সহজভাবে গ্রহণ না করা
কম বয়সের বন্ধুত্বে পরিবার খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়, যদি না বিশেষভাবে পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু পরিবারের মায়া ও দায়িত্বে জড়িয়ে পড়া ত্রিশোর্ধ্ব কোনো মানুষ চাইলেই সবকিছু ফেলে বন্ধুকে সময় দিতে পারেন না। বন্ধুর জীবনসঙ্গীকে আপনার পছন্দ না-ও হতে পারে। কিন্তু বন্ধুত্বের খাতিরেই তাঁর সঙ্গে সম্মানসূচক সম্পর্ক রাখতে হবে আপনার। দুই বন্ধু যদি ছুটির দিনটা একসঙ্গে কাটাতে চান, তাহলে দুজনের পরিবারকেও এই সূত্রে এক করা যেতে পারে। তাতে একই সঙ্গে বন্ধু ও পরিবারকে সময় দেওয়া সম্ভব হবে। সব সময় পরিবারকে যুক্ত না করলেও মাঝেমধ্যে এভাবে দেখা করার আয়োজন করতে পারেন।
শেষ মুহূর্তে ‘না’ বলা
ত্রিশের পর নিজের বা বন্ধুদের জন্য সময় বের করা আপনার জন্য যেমন কঠিন, তেমনি কঠিন আপনার বন্ধুর জন্যও। বন্ধুর সঙ্গে দেখা করা বা কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা করে থাকলে তাই এই বয়সে অবশ্যই নিজের কথা রাখবেন। নিতান্ত জরুরি কোনো অবস্থার সৃষ্টি না হলে কিছুতেই বন্ধুকে শেষ মুহূর্তে ‘না’ বলা থেকে বিরত থাকাই ভালো। তিনিও তো পরিকল্পনা অনুযায়ী অন্যান্য কাজ ফেলে আপনার জন্য সময় বের করেছিলেন। তাঁর সময়কে মূল্যায়ন করুন। হঠাৎ আপনার ‘ইচ্ছা করছে না’ বলেই তাঁকে ‘না’ বলে দেবেন না। অন্যান্য বয়সের চেয়ে এই বয়সে বলা এমন একটি ‘না’ নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বন্ধুত্বে।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট
