ভারতীয় পণ্যে মার্কিন শুল্কের ধাক্কা: অ্যামাজন-ওয়ালমার্ট বন্ধ করেছে আমদানি, রপ্তানিতে বিপর্যয়

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষিত নতুন শুল্ক নীতির সরাসরি প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ভারতের বাণিজ্য খাতে। দেশটির পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রেক্ষাপটে গত বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকালে ভারতের পুঁজিবাজারে বড় ধস নামে। এবার আরও বড় ধাক্কা এসেছে—বিশ্বখ্যাত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন ও ওয়ালমার্ট ভারতীয় পণ্য গ্রহণ স্থগিত করেছে।
ভারতীয় রপ্তানিকারকরা জানাচ্ছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা ই-মেইল ও চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন, তারা আপাতত ভারত থেকে পোশাক ও টেক্সটাইল পণ্যের চালান বন্ধ রাখতে চাচ্ছেন। শুল্ক বৃদ্ধির কারণে বাড়তি খরচ যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকেরা বহন করতে অনিচ্ছুক, এবং সেই বোঝা পুরোপুরি ভারতীয় রপ্তানিকারকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিগুণ শুল্ক আরোপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পণ্য রপ্তানির খরচ ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে অর্ডার কমে যেতে পারে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। এতে ভারতের পোশাক ও টেক্সটাইল খাতে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি ডলারের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভারতের বেশ কয়েকটি প্রধান রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান—যেমন ওয়েলস্পান লিভিং, গোকালদাস এক্সপোর্টস, ইন্ডো কাউন্ট ও ট্রাইডেন্ট—তাদের রপ্তানির ৪০ থেকে ৭০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে করে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যেই বড় অর্ডার স্থগিত কিংবা বাতিল হওয়ার মুখোমুখি হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের মোট ৩৬.৬১ বিলিয়ন ডলারের পোশাক ও টেক্সটাইল রপ্তানির মধ্যে প্রায় ২৮ শতাংশই গেছে যুক্তরাষ্ট্রে, যা এই বাজারকে ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় গন্তব্যে পরিণত করেছে।
বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম টেক্সটাইল রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে ভারত আশঙ্কা করছে, এই পরিস্থিতিতে তারা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর কাছে বড় অর্ডার হারাতে পারে। কারণ, বাংলাদেশের ওপর বর্তমানে মাত্র ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ রয়েছে, যা তুলনামূলকভাবে কম।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় পণ্যের ওপর মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে এবং বাকি ২৫ শতাংশ কার্যকর হবে আগামী ২৮ আগস্ট থেকে। এই পদক্ষেপের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করছে, যা ওয়াশিংটনের অসন্তোষের একটি বড় কারণ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই শুল্ক নীতির ফলে ভারতের 'মেক ইন ইন্ডিয়া' কৌশল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। একই সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য ভারসাম্যও নতুন করে পুনর্গঠিত হতে পারে।