ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ছায়ায় নতুন কৌশলে উপসাগরীয় দেশগুলো

মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ দুই দেশের সামরিক ও রাজনৈতিক দুর্বলতাকে উন্মোচিত করেছে। তবে এই সংঘাত থেকে একপ্রকার নিরপেক্ষ থাকলেও সবচেয়ে কৌশলী ভূমিকা নিয়েছে উপসাগরীয় (গালফ) দেশগুলো। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েল ও ইরানের দুর্বলতা এখন এই দেশগুলোর জন্য একটি কৌশলগত সুযোগ।
জ্বালানি তেলে সমৃদ্ধ এই দেশগুলো নিজেদের ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধির লক্ষ্যে তৎপর হয়ে উঠেছে। ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করে ইসরায়েলি ও মার্কিন যুদ্ধবিমানের হামলা ও পরমাণু স্থাপনায় আঘাত যুদ্ধের সামরিক বাস্তবতা দেখিয়ে দিয়েছে, কিন্তু জনসমর্থনের অভাবে ইসরায়েল যুদ্ধ থামাতে আগ্রহী হয়—এমন মন্তব্য করেছেন আরব কর্মকর্তারা।
কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বাদের আল-সাইফ বলেন, “ইসরায়েল আকাশে শ্রেষ্ঠত্ব দেখালেও, ইরান প্রতিরোধ করেছে। ‘অজেয় ইসরায়েল’ ভাবমূর্তি এবার ক্ষতিগ্রস্ত।”
এ অবস্থায় গালফ রাষ্ট্রগুলো কৌশলগত ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছে। সৌদি যুবরাজের ভাইয়ের সাম্প্রতিক তেহরান সফর, এবং গালফ রাষ্ট্রগুলোর ইরানে বিনিয়োগের আগ্রহ সেই দিকেই ইঙ্গিত করে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস হয়েছে এবং আলোচনার নতুন অধ্যায় শুরু হবে। গালফ দেশগুলো এই উদ্যোগকে সমর্থন করছে এবং তেহরানে কূটনৈতিক প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
এদিকে গাজায় ৫৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির মৃত্যুতে গালফজুড়ে জনমত ফুঁসে উঠেছে। ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের এক জরিপ বলছে, সৌদির ৯৬ শতাংশ নাগরিক ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের বিরোধিতা করছে।
সৌদি আরব এখন ইসরায়েলের ওপর চাপ বজায় রাখছে এবং বলছে, তেলআবিব যদি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রশ্নই ওঠে না।
বিশ্লেষক আয়হাম কামেল বলেন, “এই সংকট উপসাগরীয় নেতৃত্বকে সামনে তুলে এনেছে। তারা নিজের ভূমি রক্ষা করেই আঞ্চলিক ভারসাম্য বজায় রেখেছে।”
মূল বার্তা: ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ সামরিক উত্তেজনার চেয়ে বেশি করে আঞ্চলিক কূটনীতিকে নাড়া দিয়েছে। এবং সেই কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে এখন উপসাগরীয় শক্তিগুলো।