ইরান-আইএইএ দ্বন্দ্ব: পারমাণবিক কর্মসূচির স্বচ্ছতা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তায় উদ্বেগ বৃদ্ধি

ইরানের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) কে অসহযোগিতা করার সিদ্ধান্তে পারমাণবিক কর্মসূচির স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কাও বেড়েছে।
ইরানের পার্লামেন্ট আইএইএ-র বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে যে, সংস্থাটি পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষ করে, ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর আইএইএ-র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা আইএইএ-র সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করেছে যতক্ষণ না পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
আইএইএ বিশ্বের পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের তদারকি এবং পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধের দায়িত্ব পালন করে আসছে। ২০১৫ সালে ইরানসহ বিশ্বের প্রধান পরাশক্তির সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি হয়, কিন্তু ২০১৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চুক্তি বাতিল করলে ইরান তার পারমাণবিক কার্যক্রম জোরদার করে। বর্তমানে ইরান ইউরেনিয়াম প্রায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করেছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে অগ্রসর হওয়ার ইঙ্গিত।
ইরানের বিরুদ্ধে ১৩ জুন ইসরাইলের হামলা ও পরে মার্কিন সামরিক অভিযান পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বড় ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করেছে, যদিও আইএইএ এবং পেন্টাগনের মূল্যায়নে মূল সেন্ট্রিফিউজগুলো অক্ষত রয়েছে। এছাড়া ইরান সম্প্রতি একটি গোপন নতুন পারমাণবিক স্থাপনা নির্মাণ করেছে বলে জানা গেছে, যার সঠিক অবস্থান জানা যায়নি।
আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে, পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক হামলা জেনেভা কনভেনশনের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হয় এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পর্যবেক্ষক দেশগুলোও হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
ক্রেমলিনের বক্তব্য অনুযায়ী, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে হামলা আইএইএ-র সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে এবং ইরানের আইএইএ-র সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার সিদ্ধান্তকে বৈধ প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা উচিত। তবে আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রসি জানিয়েছেন, পরিদর্শকরা ইরানে ফেরত যেতে চান এবং কূটনৈতিক সমাধানের জন্য সুযোগ এখনও আছে।
ইরানের নতুন সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যুদ্ধবিরতি অব্যাহত থাকলে আন্তর্জাতিক কূটনীতিকেরা নতুন চুক্তির জন্য আলোচনা চালিয়ে যেতে চাইবেন, যদিও তা কঠিন হবে। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধে জোর দেয়, যা ইরান বারবার প্রত্যাখ্যান করে আসছে।