কাস্টমসের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচিতে চট্টগ্রামে ১৪ হাজারের বেশি রপ্তানি কনটেইনার জটে, বিপাকে রপ্তানিকারকরা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলমান ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে রপ্তানি কার্যক্রমে বড় ধরনের অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। মাত্র দুইদিনের কর্মসূচিতে চট্টগ্রামের ১৯টি বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে জমে গেছে ১৪,৩৭১টি একক রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার। একই সঙ্গে ৩,৬০০ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ডিপো ও বন্দর এলাকায় আটকে আছে।
গত শনিবার ও রোববার শুল্কায়ন প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় এসব কনটেইনার বন্দরে পাঠানো যায়নি, যার ফলে বিপুল পরিমাণ রপ্তানি পণ্য নির্ধারিত সময়ে বিদেশে পাঠানো সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে রোববার তিনটি জাহাজ ৩,৬৮০ একক রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করার কথা থাকলেও তা ব্যর্থ হয়। এখন সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে পাঁচটি জাহাজে সেই কনটেইনার তোলার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন রপ্তানিকারকরা।
ব্যবসায়ীদের দাবি ও সরকারি চাপে অবশেষে রোববার রাত থেকে কাস্টমস কর্মকর্তারা রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়ন কার্যক্রমে ফিরে আসেন। তবে আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে বলে জানানো হয়। এনবিআরের সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন নিয়ে অসন্তোষের কারণে গত ১২ মে থেকে কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলনে নেমে ছিলেন। এতে রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমেও স্থবিরতা নেমে আসে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কর্মসূচি স্থগিত হলেও রপ্তানি কার্যক্রমে যে জট সৃষ্টি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে অন্তত এক সপ্তাহ সময় লাগবে। শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল আলম জুয়েল বলেন, "প্রতিদিন গড়ে ২২০০ থেকে ২৫০০ কনটেইনার ডিপো থেকে বন্দরে পাঠানো সম্ভব হয়। এই গতি অনুযায়ী জমে থাকা ১৪ হাজারের বেশি কনটেইনার জাহাজে তুলতে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় লাগতে পারে।"
বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী জানান, “এই জটের ফলে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত পোশাক শিল্প মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে। অনেক বিদেশি ক্রেতার কাছে ডেলিভারির সময়সীমা লঙ্ঘিত হলে তা ভবিষ্যতে বাজার হারানোর আশঙ্কা তৈরি করবে।”
বেসরকারি কনটেইনার ডিপো সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, “দুই দিনের শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় চট্টগ্রামের ডিপোগুলোতে ১৪ হাজার ৩৭১টি কনটেইনার জমে গেছে। বর্তমানে ডিপোগুলোর চারপাশে ৩৬০০-এর বেশি ট্রাক অপেক্ষমাণ। রাত থেকে শুল্কায়ন শুরু হলেও আগের ক্ষতি পূরণে সময় লাগবে।”
ব্যবসায়ী মহলের চাপ ও সরকারের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত কাস্টমস কর্মকর্তারা কর্মসূচি স্থগিত করতে বাধ্য হন। শীর্ষ ১৩টি ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা গত দু’দিন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সমঝোতায় আসেন।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৮৮ শতাংশের বেশি। অথচ শুল্ক আদায়কারী সংস্থা হিসেবে কাস্টমসের এই অচলাবস্থায় রাজস্ব আহরণ ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে দেশ।
চট্টগ্রাম বন্দর ও ডিপো এলাকায় শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় রপ্তানিতে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা কেবল ক্ষণস্থায়ী নয়—বরং দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে দেশের অর্থনীতিতে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জমে থাকা কনটেইনার জাহাজে তুলতে না পারলে রপ্তানিতে বড় ধরনের ক্ষতি, চুক্তি ভঙ্গ এবং বিদেশি ক্রেতার আস্থা হারানোর শঙ্কা রয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কৌশলী পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।