৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার, কয়েকমাসেই নাজুক অবস্থা মাদার বখশ হলের ওয়াশরুম!

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মাদার বখশ হলের দুটি ব্লকের ওয়াশরুম সংস্কারে ব্যয় হয়েছে ৩৪ লাখ টাকার বেশি। তবে সংস্কার শেষ হওয়ার কয়েকমাসের মধ্যেই সেগুলোতে দেখা দিয়েছে ত্রুটি। কোথাও টাইলস ধসে পড়ছে, কোথাও ঝর্নার ট্যাপ খুলে পড়ে যাচ্ছে, আবার অনেক দরজাই ঠিকভাবে বন্ধ হচ্ছে না। কাজের এমন নাজুক মানে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
হল প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী,প্রথম ব্লকের ওয়াশরুম সংস্কারে খরচ হয়েছে ১৮ লাখ ২৮ হাজার ৫০৭ টাকা, এবং দ্বিতীয় ব্লকে ব্যয় হয়েছে ১৫ লাখ ৯৪ হাজার ৬০৫ টাকা। সব মিলিয়ে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৩৪ লাখ ২৩ হাজার ১১২ টাকা।
তিন মাসের মতো সময় ধরে এই সংস্কারকাজ চলে। ওয়াশরুমে টাইলস বসানো, কমোড, বেসিন, পাইপলাইন, ঝর্নার ট্যাপ, দরজা ইত্যাদি পরিবর্তন ও নতুনভাবে বসানো হয়। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার কয়েকমাস যেতে না যেতেই বিভিন্ন ত্রুটি ধরা পড়ে।
১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের শিপন ইসলাম বলেন, এতো সময় নিয়েও কাজ করার পর ও ঠিকমতো সমস্যা সমাধান হয়নি। বেসিন এতটাই ছোট যে একজন মুখ ধুলে পাশে থাকা আরেকজন ভিজে যায়। ঝুড়ির স্বল্পতা, স্যান্ডেল না থাকা—সবকিছু মিলিয়ে ব্যবস্থাপনার ঘাটতি স্পষ্ট। মাঝে মাঝে ছাদ গড়িয়ে পানি পড়ে, অথচ ঝরনায় পানি আসে না—এটা যে কতটা বিরক্তিকর, তা বলে বোঝানো যাবে না।"
বাংলা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী রবিউল আওয়াল বলেন,একদিকে টাইলস উঠে যাচ্ছে, অন্যদিকে ট্যাপ খুলে পড়ছে। নতুন দরজা লাগিয়েছে কিন্তু সেগুলাও ঠিকভাবে বন্ধ হয় না। এত টাকা খরচ হলো, কিন্তু অবস্থা আগের চেয়েও খারাপ।”
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে ৩য় ব্লকের ওয়াশরুম সংস্কারকাজ শুরু না হওয়ায় সেখানকার শিক্ষার্থীরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, দুই ব্লকের কাজ শেষ হলেও ৩য় ব্লকের নাজুক অবস্থা কাটছে না। ত্রুটিপূর্ণ ওয়াশরুম ব্যবহার করে নানান ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের।
এ বিষয়ে হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,
“সংস্কার কাজ প্রকৌশল দপ্তরের তত্ত্বাবধানে হয়েছে। কোনো সমস্যা থাকলে সেখানে জানাতে হবে।”
তবে প্রকৌশল দপ্তরের পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মের্সাস মাহী এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, কাজটি তারা বিশ্ববিদ্যালয় হল প্রশাসনের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন করেছেন। কাঠের দরজা না লাগানোর বিষয়ে তারা বলেন, এটি তাদের কাজের অন্তর্ভুক্ত ছিল না, তাই এ বিষয়ে তারা কিছু বলতে পারবেন না। তবে টাইলস খুলে পড়ার প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা দ্রুত এসে তা মেরামত করে দেবেন।
মাদারবখস হলের প্রভোস্ট শাহ মাহাদী সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন মিটিং এ আছে। এবং পরবর্তীতে বার্তা পাঠালে তিনি কোনো উত্তর দেন নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সংস্কার কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে দীর্ঘদিন ধরেই অসন্তোষ রয়েছে। এবার মাদার বখশ হলের ওয়াশরুম সংস্কারের ক্ষেত্রেও সেই অভিযোগই আবার সামনে আসছে।