প্রতিকূল সময়ের লড়াই শেষে রাবি ছাত্রদলের হল কমিটির নেতৃত্ব!

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) রাজনীতি একসময় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল স্বৈরাচারী দমন-পীড়নের কারণে। ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কর্মীরা রাজনীতি করার সুযোগ হারিয়েছিল, ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশে বহুদিন তাদের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত ছিল। সেই অন্ধকার সময়ে কয়েকজন তরুণ নিজেদের জীবন ও ভবিষ্যতের ঝুঁকি নিয়ে দলের পতাকা হাতে রাজপথে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রতিটি আন্দোলনে তারা ছিলেন সামনের সারিতে, কখনো গ্রেপ্তার-হামলার ভয়, কখনো প্রাতিষ্ঠানিক চাপ—কিছুই তাদের থামাতে পারেনি।
সেই দীর্ঘ প্রতিকূলতা পেরিয়ে, আজ তারা নির্বাচিত হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল কমিটির নেতৃত্বে।
হাবিবুল বাশার প্রিন্স, দীর্ঘদিন প্রতিকূল সময়ে দলের পতাকা বহন করে অবিচল থেকে লড়াই করেছেন। তিনি এখন শহীদ হবিবুর রহমান হল ছাত্রদলের সভাপতি। দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি বলেন, "রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হল ছাত্রদলের সভাপতি নির্বাচিত হওয়া আমার রাজনৈতিক ও ছাত্রজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। দুঃসময়ে ছাত্রদলের পতাকা বহন করেছি, নিঃস্বার্থভাবে দলের আদর্শকে লালন করেছি, এবং প্রতিটি প্রতিকূলতার মুখে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি। আজ সেই লড়াইয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ আমি এই দায়িত্ব পেয়েছি। এই দায়িত্ব যেন শুধু একটি পদ নয়, বরং ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করার একটি সুযোগ হয়ে ওঠে। আমি চাই শহীদ হবিবুর রহমান হলে একটি গণতান্ত্রিক, নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে।"
মহিউদ্দিন আহমেদ সীমান্ত, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে উঠে আসা আরেক তরুণ। তিনি হয়েছেন শহীদ জিয়াউর রহমান হল ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি। দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি বলেন, "কঠিন সময়ে আমি দলের আদর্শ এবং সঠিক পথ ধরে রাজনীতি করে এসেছি এবং যে কোনো প্রতিকূলতার মোকাবেলা করেছি দৃঢ়তার সঙ্গে। যার ফলশ্রুতিতে আজ আমি শহীদ জিয়াউর রহমান হল ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি। এই সম্মানজনক দায়িত্ব পাওয়ায় আমি কৃতজ্ঞ। আমি চাই শহীদ জিয়াউর রহমান হল যেন এক নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয় যেখানে ছাত্ররা স্বাধীনভাবে নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারে, যেখানে শিক্ষার পরিবেশ থাকবে সবার জন্য উন্মুক্ত ও সমান। আমাদের লক্ষ্য হবে একটি সহযোগী, গণতান্ত্রিক ও মানবিক সম্প্রদায় গড়ে তোলা, যেখানে প্রতিটি ছাত্র তার স্বপ্ন পূরণে সাহস ও সুযোগ পাবে।"
জুনায়েদ আহমেদ সাগর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই রাজনীতির মাঠে সক্রিয়। তিনি এখন সৈয়দ আমির আলী হল ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি বলেন, "২০২১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরই পরিচয় হয় বন্ধু রাকিব এবং প্রিন্সের সাথে। আমরা সবাই জাতীয়তাবাদী পরিবারের সন্তান হওয়ায় অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রাজনীতি চর্চার যাত্রা শুরু করি। সেই প্রথম বর্ষ থেকেই অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে, যে যাত্রা আমরা শুরু করি আজ তা এই পর্যন্ত। এরই মধ্য আমাদের সাথে সংযুক্ত হয় আমাদের অনেক বন্ধু, জুনিয়র যারা প্রত্যেকেই জাতীয়তাবাদী আদর্শের সৈনিক। সেই তিনজন থেকে আজ আমরা অনেকজন এবং আমাদের প্রত্যেকের রাজনৈতিক মূল দর্শন হচ্ছে জনসেবা।"
তিনি আরো বলেন, "বিগত বছরগুলোতে ছাত্র রাজনীতির যে নোংরাচর্চা আমরা দেখেছি সেটা যেন কোন অবস্থাতেই ক্যাম্পাসে আর ফিরে না আসে এবং ক্যাম্পাসে বুদ্ধি ভিত্তিক এবং নতুন ধারার রাজনীতি চর্চা শুরু করতে আমরা সবসময় বদ্ধ পরিকর। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে এবং জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা যে বিজয় অর্জন করেছি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল যেকোনো মূল্যে তা রক্ষা করবে বলে আমি মনে করছি। আমার উপর অর্পিত পবিত্র দায়িত্ব সৎ ও নিষ্ঠার সাথে পালনে আমি অঙ্গীকারবদ্ধ। পরিশেষে ধন্যবাদ জানাচ্ছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহি ভাই এবং সাবেক আহবায়ক কমিটির সকল সদস্যকে যাদের নেতৃত্বে আমরা আজ সবাই ঐক্যবদ্ধ।"
আব্দুল্লাহ আল মুরতাজা, প্রতিকূল সময়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়া আরেক সাহসী মুখ। তিনি হয়েছেন শহীদ জিয়াউর রহমান হল ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক। তার বক্তব্য তিনি বলেন, "২০২২ সালের ২৩ মে থেকে শুরু হওয়া সময়টা ছিল ভীষণ প্রতিকূল। দমন-পীড়নে স্তব্ধ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা হারিয়েছিল অধিকার আদায়ের সাহস। সেই অন্ধকারে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ আমার জন্য হয়ে ওঠে আলোর প্রদীপ। তাঁর গণতন্ত্র, আত্মনির্ভরশীলতা ও দেশপ্রেমের দর্শন আমাকে লড়াইয়ের শক্তি দিয়েছে, দিয়েছে অবিচল থাকার সাহস। আজকের অবস্থান তাই কেবল ব্যক্তিগত অর্জন নয়—এটি দীর্ঘ সংগ্রাম ও অধ্যবসায়ের ফসল। আমার রাজনীতি কোনো ক্ষমতার দম্ভ নয়, কোনো ব্যক্তিগত উচ্চাভিলাষ নয়—আমার রাজনীতি হলো মানুষের জন্য মানুষের পাশে দাঁড়ানো এক অঙ্গীকার।"
আহসান রাকিব, প্রতিকূল সময়ের আরেক লড়াকু মুখ, তিনি হয়েছেন বিজয় ২৪ হল ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। দায়িত্ব পেয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘ দুঃশাসন আন্দোলন সংগ্রাম এর মাধ্যমে আমরা আজকে কাঙ্খিত ফলাফলের মাধ্যমে দায়িত্বের ভাগ পেয়েছি। এই দায়িত্বের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করার সুযোগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে গণতান্ত্রিক, নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে কাজ করে যাবো। সেই সাথে সকল আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা ও সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করছি।
এছাড়াও, সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকে নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন হামিদ ইয়াসির রমজান, তিনি হয়েছেন শেরে বাংলা হল ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এবং ফাহিম শাহরিয়ার, যিনি ইউনিয়ন ছাত্রদল থেকে উঠে এসে এখন হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক।
উল্লেখ, শনিবার (১৬ আগষ্ট) রাত ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ফেসবুক পেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি ছাত্র হলের আংশিক কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এবং হল কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে বলা হয়।