গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদে রাবিতে কর্মরত সাংবাদিকদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ

গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কর্মরত সাংবাদিকরা। আজ শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এসময় তারা চার দফা দাবি উত্থাপন করেন।
তাদের দাবিগুলো হলো - দ্রুত সময়ে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার বিচার নিশ্চিত করা, নিহত তুহিনের পরিবারের পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ, সাংবাদিকদের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে বাধা দেওয়ার শাস্তি স্বরূপ সর্বোচ্চ শাস্তির আইন প্রণয়ন ও গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহত হওয়া সাংবাদিকদের তালিকা প্রণয়ন।
মানববন্ধনে রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সোহাগ আলী বলেন, “আমাদের এই ধরনের দাবি নিয়ে দাড়ানোর কথা না, তাও এখানে দাড়াতে হচ্ছে। কারণ আজ পর্যন্ত যত সাংবাদিক হত্যা কিংবা নির্যাতনের শিকার হয়েছে সেগুলোর কোনো বিচার হয়নি। আমাদের দেশে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে সেখানে তারাও ধরে নিয়েছে সাংবাদিকদের হত্যা করলে এর কিছুই হবে না। রাষ্ট্র যদি এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের না হতে না পারে তাহলে এমন হত্যাকান্ড বাড়তেই থাকবেঅ”
বর্তমান সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মনির হোসেন মাহিন বলেন, “সাংবাদিক তুহিনকে প্রকাশ্যে যেভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তা আমরা সবাই দেখেছি। জুলাই-পরবর্তী সময়েও যদি সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়—এই প্রশ্ন আমি ইন্টেরিম সরকারের কাছে রাখছি।”
তিনি বলেন, “আজ আমাদের এখানে দাঁড়ানোর কথা নয়। এখন আমাদের রাষ্ট্র নিয়ে ভাবার কথা, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করার কথা। কিন্তু কেন আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি? আমরা দাঁড়িয়েছি—আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাইতে।”
ইন্টেরিম সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, “আপনারা গদিতে বসেছেন শুধু এসির হাওয়া খাওয়ার জন্য নয়। হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আপনারা এ গদিতে বসেছেন। যদি সেই দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, তাহলে গদি ছেড়ে দিন। আপনাদের বাইরে বাংলাদেশে অনেক যোগ্য ব্যক্তি আছেন, যারা দেশকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারবেন এবং আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন। সাংবাদিকদের অবহেলার চোখে দেখার কোনো সুযোগ নেই। সাংবাদিকরা যেমন রাষ্ট্রের প্রয়োজনে কলম দিয়ে লিখতে পারে, তেমনি প্রয়োজনে সেই কলমকে অস্ত্রে পরিণত করে বিপক্ষেও লিখতে পারে। তাই আমরা বর্তমান সরকারকে সতর্ক করছি—এই ধরনের সাহস যেন আর কেউ না দেখাতে পারে, তার জন্য আমরা ন্যায়সঙ্গত ও যথাযথ বিচার চাই।”
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ইরফান তামিম বলেন, “দেশের বর্তমান যে রাজনৈতিক অবস্থা এবং বিগত সময়ে আমরা যে হত্যাকান্ড ও আইনশৃঙ্খলা দেখেছি এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এমনকি বিগত সময়ের চেয়ে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলার অবস্থা আরও করুণ। আমাদের প্রত্যাশা ছিল অভ্যুত্থান এর সরকার শিক্ষার্থীদের পক্ষ হয়ে কথা বলবে এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কিন্তু সেটা বাস্তব অর্থে হয় নি। গাজীপুর এর যে ঘটনাটা দেখেছি এটা নিয়মিত,ধারাবাহিক সাংবাদিক এর উপর নির্যাতনের একটি চিত্র। এর আগে সাগর-রুনী হত্যাকান্ডের বিষয়টা দেখেছি, শতবার এর উপরও রিপোর্ট পার হয়েছে। এই যে ধারাবাহিক হত্যাকান্ডগুলো দেখেছি এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আল জাবের আহমেদ, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আরিফ উজ জামান কোরবান, রাবি প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ সাকিব এবং সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক এম. শামিম। এসময় রাবির তিন সাংবাদিক সংগঠনের প্রায় অর্ধশতাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।