নির্বাচন নিয়ে আর কোনো সংকট থাকবে না: মির্জা ফখরুল

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অন্তর্বর্তী সরকারের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রস্তুতি নেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “এই নির্দেশনা প্রশংসার দাবিদার। দেশের মানুষ ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য প্রাণ দিয়েছে। আমি মনে করি, এখন নির্বাচন নিয়ে আর কোনো সমস্যা হবে না।”
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিইউজে ও বিএফইউজে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এরপর তিনি জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের ওপর চালানো নির্যাতনের চিত্র নিয়ে আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনীরও উদ্বোধন করেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “বিএনপি এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে খাটো করে দেখতে চায় না। বরং আমরা এটি যথাযথভাবে মূল্যায়ন করে জুলাই সনদের সুপারিশপত্র সরকারের কাছে জমা দিয়েছি।”
তিনি বলেন, “বিএনপি জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে। আমরা গঠনমূলক সংস্কারকে স্বাগত জানাই। তবে কেউ যদি বলে বিএনপি সংস্কারের পথে বাধা দিচ্ছে, সেটা হবে ভুল ব্যাখ্যা।”
তার ভাষ্য অনুযায়ী, গত ১৭ বছরে ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা হয়েছে এবং ২০ হাজারের মতো নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। “এই বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া যায় না। যারা অস্বীকার করছেন, তারা গণতন্ত্রের দিকেই চোখ বন্ধ করে আছেন।”
সীমান্ত হত্যা, পুশইন ও অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে উদ্বেগ
সীমান্ত হত্যা ও পুশইনের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সীমান্তে প্রতিনিয়ত মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, পুশইন চলছে। এটা হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। সরকারকে এই বিষয়ে ভারতের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে কূটনৈতিক দরকষাকষি করতে হবে। একই সঙ্গে যৌক্তিক হারে পানির প্রাপ্তি নিশ্চিত করতেও আন্তরিক আলোচনার প্রয়োজন।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ ধরনের শুল্ক আরোপ দেশের পোশাকশিল্পকে মুখ থুবড়ে ফেলতে পারে, যা অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ সংকট তৈরি করবে। সরকারকে অবশ্যই গুরুত্বসহকারে পদক্ষেপ নিতে হবে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় এখন সবচেয়ে বেশি দরকার জাতিগত ঐক্য। বিভক্তি নয়, ঐক্যের ভিত্তিতেই অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হতে পারে।”
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “রাজনীতি, জনগণ ও গণমাধ্যম—এই তিন শক্তির সমন্বয়েই রাষ্ট্র গঠন সম্ভব। বিতর্ক হোক, মতবিরোধ থাকুক; কিন্তু ব্যক্তিগত আক্রোশ বা দলে দলে বিভক্তি যেন না হয়।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, “স্বৈরাচার চলে গেলেও তার মানসিকতা রয়ে গেছে। ফেসবুকে সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে—এটি গণতান্ত্রিক চর্চার পরিপন্থী। মানুষ এখন সচেতন—তাদের বোকা ভাবা ঠিক হবে না।”
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার আলোচনা শুরু করেন ‘জুলাই বিপ্লবে’ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং তার লেখা কবিতা ‘জুলাই বাংলাদেশ’ পাঠ করে। তিনি গুম-খুন ও রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার সবার প্রতিও শ্রদ্ধা জানান।