অসম্পূর্ণ জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতিবাদস্বরূপ কক্সবাজার গিয়েছি: হাসনাত

আগের নেয়া সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো বোঝার চেষ্টা ও পরবর্তী করণীয় নিয়ে ভাবতে কক্সবাজারে গিয়েছিলাম। একইসাথে এটি ছিলো অসম্পূর্ণ জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতি আমার নীরব প্রতিবাদ— দলের শোকজ নোটিশের জবাবে এমনটা জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণ) হাসনাত আবদুল্লাহ।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) দলের কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দেন তিনি।
শোকজের জবাবে তিনি লেখেন, ঘোষণাপত্র প্রণয়নের সময় অভ্যুত্থানের মূল চালিকাশক্তিদের সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। শহীদ পরিবার, আহত এবং নেতৃত্বদানকারীদের অনেকেই মতামত প্রদানের সুযোগ পাননি। এমনকি অন্তর্ভুক্তির ন্যূনতম সম্মানটুকুও পাননি। এতে আমিসহ অনেকেই ব্যথিত।
তিনি আরও লেখেন, ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়ায় অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন কিছু উপাদান দেখতে পাই। যেমন, ঘোষণাপত্রে সংবিধান সংস্কারের জন্য জনগণ পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের উপর দায়িত্ব অর্পণের অভিপ্রায় প্রকাশ করেছে এমনটা বলা হয়েছে। এই দাবিটি অসত্য এবং সংবিধানে মৌলিক পরিবর্তন আনার পথে বড় অন্তরায়। আমরা শুরু থেকেই গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করার দাবি করে আসছি, যা রাষ্ট্রের কাঠামোতে মৌলিক পরিবর্তন আনবে এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটাবে।
এনসিপির এই নেতা লেখেন, গত ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় আন্দোলনের আহত এবং নেতৃত্বদানকারী অনেককে এই অনুষ্ঠান থেকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেয়া হয়েছে বলে জানতে পারি। এটা শুধু রাজনৈতিক নয়, নৈতিক ব্যর্থতা বলেই মনে হয়েছে। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে এই অনুষ্ঠানে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। যেখানে ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজন, শহিদ এবং আহতদের পরিবর্তে কিছু মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর কথা এবং মতামতকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তাই সেখানে উপস্থিত থাকার কোনও ইচ্ছা বা প্রয়োজন বোধ করিনি। কাজেই, পরদিন ঢাকার বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। এর উদ্দেশ্য ছিল আগের নেয়া সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো বোঝার চেষ্টা ও পরবর্তী করণীয় নিয়ে ভাবতে কক্সবাজারে গিয়েছিলাম। একইসাথে এটি ছিলো অসম্পূর্ণ জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতি আমার নীরব প্রতিবাদ।
হাসনাত আরও উল্লেখ করেন, ৪ আগস্ট রাতে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। তাকে না পেয়ে পরবর্তীতে দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারীকে স্কুলবন্ধুদের সঙ্গে দুই দিনের জন্য ভ্রমণে যাওয়ার কথা জানাই। তাকে আহ্বায়ককে বিষয়টি জানানোর অনুরোধ করি। প্রায় ত্রিশ মিনিট পর আহ্বায়ককে বিষয়টি জানানো ও তিনি সম্মতি দিয়েছেন বলে আমাকে জানানো হয়। পরবর্তীতে আমার সঙ্গে নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী, সস্ত্রীক সারজিস আলম ও তাসনিম জারা-খালেদ সাইফুল্লাহ দম্পতি যুক্ত হন।
সাবেক এই সমন্বয়ক লেখেন, আমার ঘোরার লক্ষ্য ছিল রাজনীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে একান্তে চিন্তা-ভাবনা করা। সাগরের পাড়ে বসে আমি গভীরভাবে ভাবতে চেয়েছি গণঅভ্যুত্থান, নাগরিক কমিটি, নাগরিক পার্টির কাঠামো, ভবিষ্যৎ গণপরিষদ এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা নিয়ে। আমি এটিকে কোনো অপরাধ মনে করি না। বরং একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য এটি একটি দায়িত্বশীল মানসিক চর্চা।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, কক্সবাজার পৌঁছানোর পর হঠাৎ গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে আমরা সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। আমি তাৎক্ষণিকভাবে গণমাধ্যমকে জানাই যে, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার। হোটেল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে জানায় সেখানে পিটার হাস নামে কেউ নেই। পরবর্তীতে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় পিটার হাস তখন ওয়াশিংটনে অবস্থান করছিলেন।
হাসনাল আব্দুল্লাহ লেখেন, এই গুজব একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র এবং ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা। অতীতেও আমি এই হোটেলে থেকেছি। তখন কখনো কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হয় নি। আগেও আমি বেশ কয়েকবার ঘুরতে গিয়েছি। কিন্তু ঘুরতে আসলে দলের বিধিমালা লঙ্ঘন হয় এমন কোন বার্তা কখনো দল থেকে দেয়া হয় নি।
পরিস্থিতির আলোকে আমি মনে করি শোকজ নোটিশটি বাস্তবভিত্তিক নয়। আমার সফর ছিল স্বচ্ছ, সাংগঠনিক নীতিমালাবিরোধী নয় এবং একান্ত ব্যক্তিগত চিন্তা-ভাবনার সুযোগ মাত্র। তবুও দলীয় শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা ও রাজনৈতিক শালীনতা বজায় রেখে এই লিখিত জবাব প্রদান করছি। অসভ্য জগতে সভ্যতার এক নিদের্শন হিসেবে।
শেষে তিনি লেখেন, ঘুরতে যাওয়া অপরাধ নয়। কারণ ইতিহাস কেবল মিটিংয়ে নয়, অনেক সময় নির্জন চিন্তা ঘরে বা সাগরের পাড়েও জন্ম নেয়।