সাংবাদিক তুহিন হত্যা, ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলায় মানববন্ধন, প্রতিবাদ

গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তায় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সাংবাদিকসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ একাত্বতা প্রকাশ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন।
ঈশ্বরগঞ্জ
শনিবার (৯ আগস্ট) বেলা ১২ টায় ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সামনে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা প্রেস ক্লাবের আয়োজনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন সাংবাদিকরা।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন দৈনিক ভোরের কাগজ প্রতিনিধি মো. সেলিম, দৈনিক ভোরের পাতা প্রতিনিধি হাবিবুর রহমান, দৈনিক দেশের কণ্ঠের মুর্শেদুল কবির রিপন, দৈনিক ঢাকা প্রতিদিন প্রতিনিধি ও প্রতিদিনের কাগজের নিজস্ব প্রতিবেদক উবায়দুল্লাহ রুমি।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সাংবাদিকরা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। অথচ আজ সাংবাদিকদের কোন নিরাপত্তা নেই। চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে যখনই সাংবাদিকরা সংবাদ প্রকাশ করেন তখনই সাংবাদিকদের হামলা-মামলা, হুমকি ও হত্যার শিকার হতে হয়। গত বৃহস্পতিবার গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় প্রকাশ্য দিবালোকে চাপাতি বাহিনী সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে যেভাবে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করেছে সেটি নতুন নয়। সারাদেশে সাংবাদিকদের উপর হামলা-মামলা, হুমকী ও হত্যার ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন সাংবাদিকরা।
ভালুকা
শনিবার (৯ আগস্ট) সকালে ভালুকা প্রেসক্লাবের আয়োজনে প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। গাজীপুরে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে খুন হওয়া সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় ভালুকা প্রেসক্লাবের সভাপতি এমএ মালেক খান উজ্জল, সহ-সভাপতি এমএ সবুর, আতাউর রহমান তরফদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনির খান, কোষাধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান ফজলু, কার্যনির্বাহী সদস্য আলমগীর হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক, সাবেক সভাপতি এসএম শাহজাহান সেলিম, কামরুল হাসান পাঠান কামালসহ উপজেলার সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক এবং সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে বক্তারা সাংবাদিক তুহিনের হত্যার দ্রুত বিচার ও দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান। পাশাপাশি সংবাদ সংগ্রহের সময় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
ফুলপুর
শনিবার (৯ আগস্ট) বিকালে ফুলপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন করে মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম ফুলপুর উপজেলা শাখা। পৌরসভার গোল চত্ত্বরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
সংঠগনের সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের উপজেলা সহ-সভাপতি সেলিম রানা, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান রনি, যুগ্ম সম্পাদক জাহিদুল হক ইমন, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান রাজন, সদস্য খাদিমুল হাসান, হাদিয়াতুল ইসলাম উমরিদ প্রমুখ।
নান্দাইল
শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুর ১২ টায় ময়মনসিংহ কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের নান্দাইল উপজেলা পরিষদের সামনে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধন শেষে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- সাংবাদিক এনামুল হক বাবুল, হান্নান মাহমুদ, আলম ফরায়েজী, অরবিন্দ পাল, শামছ-ই তাবরীজ রায়হান, আহসান কাদের মাহমুদ, জহিরুল হক লিটন, মোখলেছুর রহমান,হান্নান আল আজাদ সহ প্রমুখ।
বক্তারা দাবি করেন, এদেশে গণ-মাধ্যম মুক্ত স্বাধীন নয়। সংবাদ বিপক্ষে গেলেই বিভিন্ন রকম হুমকিসহ হত্যার মত ঘটনা ঘটে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও গণমাধ্যমের মুক্ত স্বাধীনতা দিতে হবে। সাংবাদিকরা অনিয়ম দুর্নীতির সংবাদ করলেই তাকে হত্যা করতে এ সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। সেই সাথে সাংবাদিক তুহিনের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার আহবান করছি।
তুহিন হত্যার সাথে সাংবাদিক সাগর, রুনিসহ দেশের সকল সাংবাদিকদের উপর হামলা-মামলা ও হত্যায় জড়িত সকল আসামীকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে সারাদেশের সাংবাদিক মিলে বৃহৎ আন্দোলনের হুশিয়ারী দেন।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পাঁচ থেকে ছয়জন দুর্বৃত্ত চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তুহিনকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে। তিনি দৌঁড়ে ঈদগাঁ মার্কেটের একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নিলেও দুর্বৃত্তরা দোকানে ঢুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, র্যাব ও পিবিআই যৌথ অভিযানে এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে।