কোন ভঙ্গিমায় ঘুমাবেন? স্বাস্থ্যবান ঘুমের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ

ঘুম শুধু বিশ্রামই নয়, এটি শরীরের পূর্ণ পুনর্গঠনের সময়। দিনে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে যেমন শরীর ও মস্তিষ্ক দুর্বল হয়ে পড়ে, তেমনি ভুল ঘুমের ভঙ্গিও হতে পারে নানা স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ। তাই শুধু ঘুমের পরিমাণ নয়, ঘুমের ধরন বা কৌশলও স্বাস্থ্যবান জীবনের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঘুমের ধরন নিয়ে ভারতের দিল্লিভিত্তিক ওয়েলনেস হোম ক্লিনিক ও স্লিপ সেন্টারের পালমোনোলজিস্ট ডা. বিকাশ মিত্তল সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে কথা বলেন। তিনি ঘুমের ভঙ্গিমা অনুযায়ী সুবিধা-অসুবিধা ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন বিস্তারিতভাবে।
পাশ ফিরে ঘুমানো: উপকার ও অসুবিধা
উপকারিতা
১. নাক ডাকা কমে
২. মেরুদণ্ড সোজা থাকে
৩. অ্যাসিড রিফ্লাক্স ও স্লিপ অ্যাপনিয়ায় উপকার
৪. অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য বাম পাশে ঘুমানো ভালো
অসুবিধা
১. দীর্ঘসময় এভাবে ঘুমালে কাঁধ ও নিতম্বে চাপ পড়ে
২. মুখে বলিরেখা পড়তে পারে
৩. একপাক্ষিক ব্যথার ঝুঁকি থাকে
পিঠে ভর দিয়ে (চিৎ হয়ে) ঘুমানো: সুবিধা ও সতর্কতা
উপকারিতা
১. ঘাড় ও মেরুদণ্ডে সঠিক ভারসাম্য বজায় থাকে
২. বলিরেখা রোধে সহায়ক
৩. শরীরের ওজন সমানভাবে ছড়ায়
অসুবিধা
১. স্লিপ অ্যাপনিয়া ও নাক ডাকার প্রবণতা বাড়ে
২. অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য বিপজ্জনক
৩. অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা বাড়ে
কীভাবে ঘুমানো সবচেয়ে উপকারী?
ডা. বিকাশ মিত্তল বলেন, “বাম পাশে ঘুমানো সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর। এটি হজমে সহায়ক, অ্যাসিড রিফ্লাক্স কমায় এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ক্ষেত্রে হৃদযন্ত্র ও ভ্রূণের রক্তপ্রবাহ উন্নত করে।”
তবে সবসময় বাম দিকে ঘুমানো সম্ভব না হলে ডান দিকও বিকল্প হতে পারে, যদিও এতে অ্যাসিড রিফ্লাক্স বাড়ার আশঙ্কা থাকে।
যাদের সাবধান হওয়া জরুরি:
১. স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা: চিৎ হয়ে না ঘুমানোই ভালো
২. GERD (গ্যাস্ট্রিক রিফ্লাক্স রোগী): বাম পাশে ঘুমান, পিঠে ভর দিয়ে নয়
৩. অন্তঃসত্ত্বা নারী: বিশেষ করে তৃতীয় ত্রৈমাসিকে চিৎ হয়ে ঘুমানো থেকে বিরত থাকতে হবে
৪. কাঁধ বা নিতম্বে ব্যথা: পাশে ঘুমানোর সময় সাপোর্ট ব্যবহার করুন
ঘুমের গুণমান নির্ভর করে গদি ও বালিশের মানের ওপরও। ঘাড় ও মেরুদণ্ড সঠিকভাবে রাখতে উপযোগী বালিশ এবং শরীরের আকার অনুযায়ী মানানসই গদি ঘুমের সময় শরীরের চাপ কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
ঘুমের ধরন নির্ধারণের আগে নিজের স্বাচ্ছন্দ্য ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় রাখতে হবে। কারও জন্য উপকারী কোনো ঘুমের ভঙ্গি অন্যজনের জন্য সমস্যাজনক হতে পারে। তাই ঘুমজনিত জটিলতা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
স্বাস্থ্যকর ঘুম মানেই স্বাস্থ্যবান জীবন। তাই শুধু কতক্ষণ ঘুমাচ্ছেন, তা নয়— কিভাবে ঘুমাচ্ছেন, সেদিকেও নজর দেওয়া জরুরি।