গাজা পুরোপুরি দখলের পরিকল্পনায় নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার অনুমোদন, ঘোষণা দিল নেতানিয়াহুর কার্যালয়

গাজা উপত্যকা পুরোপুরি দখলে নেওয়ার লক্ষ্যে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আইডিএফের (IDF) প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা। শুক্রবার (৮ আগস্ট) দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইল জানিয়েছে, নেতানিয়াহুর "হামাসকে পরাজিত করার পরিকল্পনা" নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেয়েছে। একইসঙ্গে গাজার বেসামরিক নাগরিকদের জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার কথাও বলা হয়েছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, যুদ্ধ বন্ধের বিনিময়ে ইসরায়েল যে পাঁচটি মূলনীতি বাস্তবায়ন করতে চায়, সেগুলোর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন মন্ত্রিসভার বেশিরভাগ সদস্য। দাবিগুলো হলো:
১. হামাসের সামরিক শক্তিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস ও নিরস্ত্রীকরণ,
২. হামাসের হাতে থাকা বাকি ৫০ জন জিম্মিকে মুক্ত করা, যাদের মধ্যে প্রায় ২০ জন জীবিত বলে ধারণা,
৩. গাজা উপত্যকার সামগ্রিক নিরস্ত্রীকরণ,
৪. গাজার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতে রাখা,
৫. গাজার শাসনভার এমন একটি বিকল্প বেসামরিক সরকারের হাতে হস্তান্তর করা, যারা হামাস কিংবা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ নয়।
একদিন আগেই, ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, গাজা থেকে হামাসকে উৎখাত করা হলেও সেখানে ইসরায়েল স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চায় না। বরং, “সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শেষে” গাজার প্রশাসন এমন একটি আরব শক্তির হাতে তুলে দিতে চায় যারা “ইসরায়েলের ধ্বংস চায় না”।
তবে কার হাতে গাজার শাসন তুলে দেওয়া হবে—এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো পরিকল্পনা তিনি তুলে ধরেননি।
নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা গাজা নিজেদের কাছে রাখতে চাই না। আমরা সেখানে একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী চাই, কিন্তু শাসন করতে চাই না।”
নেতানিয়াহুর এ পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করেছেন ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ। তিনি বলেন, “এই পরিকল্পনা মানে আরও যুদ্ধ, আরও জিম্মি নিহত হবে এবং এর ফলে ইসরায়েলের অর্থনৈতিক অপচয় হবে বিপুল হারে।”
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধ ইতোমধ্যেই হাজার হাজার বেসামরিক প্রাণহানি ঘটিয়েছে এবং অঞ্চলটিকে মানবিক সংকটের মুখে ফেলেছে। ইসরায়েলি বাহিনীর লক্ষ্য ছিল হামাসকে ধ্বংস করা, তবে গাজার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা নিয়ে দেশটির অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজা দখলের পরিকল্পনা শুধু সামরিক নয়, কূটনৈতিক ও মানবিক ঝুঁকিরও জন্ম দিতে পারে।