‘জীবন্ত নরকে নতুন শব্দ যোগ হলো—দুর্ভিক্ষ’:জাতিসংঘ মহাসচিব

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা সিটি ও আশপাশের এলাকায় দুর্ভিক্ষকে ‘মানবতার ব্যর্থতা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
গতকাল শুক্রবার (২২ আগস্ট) জাতিসংঘ সমর্থিত সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) জানায়, গাজার প্রায় পাঁচ লাখ ১৪ হাজার মানুষ—অর্থাৎ এক-চতুর্থাংশ ফিলিস্তিনি—এই মুহূর্তে দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন। আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ এ সংখ্যা বেড়ে ৬ লাখ ৪১ হাজারে পৌঁছাবে।
এর মধ্যে প্রায় দুই লাখ ৮০ হাজার মানুষ উত্তর গাজার গাজা গভর্নরেটে বসবাস করে, যা ইতোমধ্যেই সম্পূর্ণ দুর্ভিক্ষকবলিত বলে জানিয়েছে আইপিসি। সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী, দক্ষিণাঞ্চলীয় দেইর আল-বালাহ ও খান ইউনিসেও সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।
আইপিসির প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় গুতেরেস বলেন, “যখন মনে হচ্ছে গাজার জীবন্ত নরক বর্ণনা করার মতো আর কোনো শব্দ অবশিষ্ট নেই, তখনই নতুন একটি শব্দ যুক্ত হলো—দুর্ভিক্ষ।”
তিনি একে “মানবসৃষ্ট বিপর্যয়” আখ্যা দিয়ে বলেন, “এটি কোনো রহস্য নয়; বরং মানবতার ব্যর্থতা ও নৈতিক আর্জি। দুর্ভিক্ষ শুধু খাদ্য সংকট নয়, বরং মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থার ইচ্ছাকৃত পতন।”
জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ইসরাইলের আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে জনগণের খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ নিশ্চিত করার দায়বদ্ধতা রয়েছে। “আমরা এই পরিস্থিতিকে দায়মুক্তি দিয়ে চলতে দিতে পারি না। আর কোনো অজুহাত নেই। পদক্ষেপ নেওয়ার সময় আগামীকাল নয়, এখনই।” তিনি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, সব জিম্মির মুক্তি এবং পূর্ণ মানবিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
তবে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আইপিসির এই প্রতিবেদনের সত্যতা অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, এ রিপোর্ট হামাসের সরবরাহকৃত অসম্পূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি, যা পক্ষপাতদুষ্ট ও ভুল।
এদিকে, শুক্রবার গাজায় ইসরাইলি হামলায় অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ক্ষুধায় অনাহারে মারা গেছেন আরও দুইজন। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ক্ষুধা ও পুষ্টিহীনতায় শিশু ও কিশোরদের মৃত্যুহার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।
এর মধ্যেই পশ্চিম তীরে অভিযান চালিয়ে আরও ৯০ জন ফিলিস্তিনিকে গ্রেফতার করেছে ইসরাইলি সেনারা।
গাজার পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলেও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ইয়েমেনের রাজধানী সানায় হাজারো মানুষ ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি দায়ী করে বলেন, ওয়াশিংটনের মদদ ছাড়া এই গণহত্যা সম্ভব হতো না। বিক্ষোভকারীরা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও গাজায় মানবিক সাহায্যের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানান।