যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতিতে বড় ধাক্কা খেল ভারতের পোশাক খাত

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষিত নতুন শুল্ক নীতির কারণে বড় ধাক্কায় পড়েছে ভারতের পোশাক রপ্তানি খাত। সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করায় মার্কিন ক্রেতারা এরই মধ্যে ভারতীয় প্রস্তুতকারকদের উৎপাদন অন্য দেশে সরানোর নির্দেশনা দিচ্ছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক ব্র্যান্ড গ্যাপ ও কোল’সের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পার্ল গ্লোবাল জানিয়েছে, তারা শুল্ক এড়াতে বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও গুয়াতেমালার ১৭টি কারখানায় উৎপাদন স্থানান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পার্ল গ্লোবালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পল্লব ব্যানার্জি বলেন, "সব ক্রেতাই ইতোমধ্যে ফোন করে জানাচ্ছেন, যেন আমরা ভারতে না থেকে বিকল্প দেশে উৎপাদন করি।"
এর আগে এপ্রিলের প্রাথমিক শুল্ক প্রস্তাব ভারতের জন্য একটি সম্ভাবনার জানালা খুলে দিয়েছিল। কিন্তু সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারতের পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসানো হচ্ছে। যার মধ্যে প্রথম ২৫ শতাংশ ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে এবং বাকি ২৫ শতাংশ কার্যকর হবে আগামী ২৮ আগস্ট থেকে।
এদিকে বাংলাদেশের ওপর শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের ওপরও একই হার এবং চীনের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ। এর ফলে ভারত তুলনামূলকভাবে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
রপ্তানিকারকদের আশঙ্কা, এই ধাক্কায় অনেক ক্রেতা ভারত ছাড়তে পারেন এবং ইথিওপিয়া বা নেপালের মতো অপেক্ষাকৃত নতুন উৎপাদন কেন্দ্রের দিকে ঝুঁকতে পারেন। ইতিমধ্যে কিছু মার্কিন ক্রেতা অর্ডার স্থগিতের নির্দেশও দিয়েছেন।
এ পরিস্থিতিকে 'অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক' আখ্যা দিয়ে নয়াদিল্লি বলছে, এর ফলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগও বড় ধাক্কা খাবে। কারণ পোশাক শিল্প আগে থেকেই শ্রমিক সংকট ও সীমিত উৎপাদন সক্ষমতার সঙ্গে লড়াই করছে।
বিদেশে কারখানা থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিকল্প পাওয়া সহজ হলেও একেবারেই ভারতের ওপর নির্ভরশীল রপ্তানিকারকদের অবস্থান এখন অত্যন্ত শোচনীয়।
ভারতের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান রিচাকো এক্সপোর্টসের মহাব্যবস্থাপক দিনেশ রহেজা বলেন, “এই শিল্পে এখন খরা চলছে। আমরা নেপালের কাঠমান্ডুতে উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করছি।”
শুধু পোশাকই নয়, অন্যান্য খাতও শুল্কের কারণে উৎপাদন স্থানান্তরের কথা ভাবছে। শীর্ষ জুয়েলারি ও ঘড়ি প্রস্তুতকারী টাইটান কোম্পানি জানিয়েছে, তারা কিছু উৎপাদন মধ্যপ্রাচ্যে সরানোর পরিকল্পনা করছে। আর রেমন্ড কোম্পানি ইথিওপিয়ার কারখানায় উৎপাদন বাড়াতে চায়, কারণ সেখানে শুল্ক হার মাত্র ১০ শতাংশ।
ভারত যখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ ও চীনের বিকল্প হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছিল, তখন এই শুল্কের সিদ্ধান্ত বড় ধরনের ধাক্কা হয়ে এসেছে। বিশেষ করে তামিলনাড়ুর তিরুপপুর শহর, যেটিকে ভারতের নিটওয়্যার রাজধানী বলা হয়, সেখানে এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে।
কটন ব্লসম ইন্ডিয়ার নির্বাহী পরিচালক নবীন মাইকেল জন বলেন, "আমাদের অনেক ক্রেতাই অর্ডার স্থগিত রাখতে বলেছেন। কেউ কেউ আবার শুল্ক পুরোপুরি কার্যকর হওয়ার আগেই যতটা সম্ভব পণ্য পাঠিয়ে দিতে বলছেন।"
তিরুপপুরে উৎপাদিত কিছু পোশাক মাত্র ১ ডলারে বিক্রি হয় যুক্তরাষ্ট্রে, আর টি-শার্টের দাম ৩.৫ থেকে ৫ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এখন এসব পণ্যের ওপরও ৫০ শতাংশ শুল্ক বসানোর ফলে প্রতিযোগিতা করতে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে ভারতীয় প্রস্তুতকারকরা।