ভেদরগঞ্জে সরকারি সহায়তায় চলছে জাটকা শিকার, জড়িত মৎস্য অফিসের কর্মকর্তারা

সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলায় জাটকা শিকার চলছে প্রকাশ্যে, আর সেই শিকারে সহযোগিতা করছে উপজেলা মৎস্য অফিসেরই একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী—এমন অভিযোগে হতবাক সচেতন মহল। অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকার ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ২৫ সেন্টিমিটারের নিচে ইলিশ ধরা, বিক্রি ও পরিবহন নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু সেই আইন উপেক্ষা করে প্রায় ১৫টি পয়েন্টে চলছে কারেন্ট জাল দিয়ে অবাধে জাটকা শিকার। স্থানীয় জেলেদের দাবি, প্রতিদিন নৌকা প্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে মাছ ধরার অনুমতি পাচ্ছেন তারা।
এ কাজে সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে ভেদরগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অফিসের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের ক্ষেত্র সহকারী ওমর সানি, বোর্ড ড্রাইভার শাহজালাল, ফিস গার্ড কবির বেপারি ও সেকান্দর সরকার এর বিরুদ্ধে।
দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত কারেন্ট জালে জাটকা ধরা হচ্ছে দেদারসে। সকাল হলে নদীতীরে ভিড়ে সজ্জিত নৌকাগুলো থেকে উঠানো হয় শত শত কেজি মাছ। পরে তা আড়তে সরবরাহ করা হয়। অথচ সরকার এই সময় জেলেদের জন্য চাল ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে, যাতে তারা নিষিদ্ধ সময়ে মাছ শিকার না করেন। বোর্ড ড্রাইভার শাহজালাল সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন,আমি ওমর সানি স্যারকে বলি, বেতনে চলে না। উনি বলেন, বোর্ডপ্রতি ১০ হাজার টাকা দিলে মাছ ধরতে পারো। আমি রাজি হয়ে টাকা দিই। আমার মতো আরও তিনটি বোর্ড জাটকা ধরে। স্যারকে টাকা পৌঁছাই সেকান্দর আর কবির।
একাধিক জেলে জানান, তারা সরাসরি সেকান্দর ও কবিরের মাধ্যমে দৈনিক ২ থেকে ৪ হাজার টাকা দেন, আর প্রতিশ্রুতি পান অভিযানে ধরা না পড়ার। জেলে আবু কালাম বলেন, সরকারি নিয়ম জানি, কিন্তু অফিস থেকেই বলছে টাকা দিলে সমস্যা হবে না। সংসার চালাতে মাছ ধরতেই হচ্ছে।
আরেক জেলে সেলিম বলেন, “আমি দুই হাজার টাকা দিইনি বলে সেকান্দর ভাই বলেছে আর জাটকা ধরতে পারবো না। অফিস থেকেই মানা করছে। অভিযোগ অস্বীকার ও দায় এড়ানো ক্ষেত্র সহকারী ওমর সানি বলেন, “অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি কাউকে ঘুষ দিই না বা নিই না।
অন্যদিকে কবির ও সেকান্দর সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে ওমর সানির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। ভেদরগঞ্জ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন,লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। আমার অফিসের কেউ জড়িত থাকলে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি আরও জানান, “আমরা ইতোমধ্যেই বেশ কিছু অভিযানে বিপুল পরিমাণ জাটকা জব্দ করেছি।
স্থানীয় সংগঠন ‘নদী রক্ষা আন্দোলন’ বলছে,সরকার শত চেষ্টা করলেও যদি মৎস্য কর্মকর্তারাই এই অনিয়মে জড়িত থাকেন, তাহলে ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম প্রশ্নের মুখে পড়ে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়া কোনো পরিবর্তন আসবে না।