বালু উত্তোলন বন্ধ ও স্থায়ী বেড়িবাঁধের দাবিতে কাঁচিকাটায় মানববন্ধন

শরীয়তপুরের ভেদেরগঞ্জ উপজেলার কাঁচিকাটা এলাকায় বালুমহল ঘোষণা দেওয়ার প্রক্রিয়ার প্রতিবাদে নদীর পাড়ের প্রায় ৭ কিলোমিটার অংশে মানববন্ধন করেছে কয়েকহাজার মানুষ।স্থানীয়দের দাবি পদ্মার এই অংশে বালু উত্তোলনের ঘোষণা এলে সেখানে অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলন হবে, নদী ভাঙ্গনের প্রকোপ এর আগেও তারা সহ্য করে হারিয়েছে ভিটেমাটি সহ সব সম্বল। শনিবার (০৩ মে) সকাল ১১ টায় কাঁচিকাটায় দ্রুত বালুমহাল ইজারা প্রক্রিয়া বন্ধ করার পাশাপাশি ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবীতে মানববন্ধন করেন স্থানীয়রা।
জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাঁচিকাটা ইউনিয়নটি পদ্মা নদী বেষ্টিত। দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে এই এলাকায় বসবাস করছে অন্তত ৫০ হাজার বাসিন্দা। বেশ কয়েকবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে এই অঞ্চলের অনেক পরিবার তাদের সহায়-সম্বল হারিয়েছে। সম্প্রতি ওই এলাকায় উত্তর-পূর্ব পাশে পদ্মা নদীর চরের ২২.৬৩ একর ভূমি বালুমহল ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। পরবর্তীতে তারা জায়গায়টির বিষয়ে সমীক্ষা চালাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ কয়েকটি দপ্তরে চিঠি প্রেরণ করে। উপজেলা প্রশাসন বলছে, যে জায়গাটিতে বালু মহাল দেয়ার সিদ্ধান্ত চলমান রয়েছে সেই জায়গায় পর্যাপ্ত পরিমান বালু রয়েছে। সেখানে সরকারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বালু অপসারণ করা হলে কাঁচিকাটা যে এলাকা নদী গভীর হয়ে ভাঙন হচ্ছে, সেই জায়গাটিতে আর ভাঙন হবে না। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে জেলা প্রশাসনের প্রস্তাবিত বালুমহালের জায়গাটি পরিদর্শন করে, যদি বালু অপসারণ করা হলে স্থানীয়রা ভাঙন থেকে রক্ষা পায় তাহলে সেভাবেই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। এদিকে জায়গাটিতে বালুমহাল ইজারা দেয়া হলে বালু উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙন প্রকট আকার ধারণ করবে বলছেন স্থানীয় লোকজন। তাই ইজারা বন্ধের দাবী জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন জানানোর পাশাপাশি ভিটেমাটি রক্ষায় আজ বেলা ১১টার দিকে ৭ কিলোমিটার অংশে প্রায় ১০ হাজার মানুষ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। এতে অংশ নেয় স্থানীয় বাসিন্দা, বিদ্যালয়, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেসার মানুষ। তারা হুঁশিয়ারি দেন, দাবি পূরণ না হলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
মোস্তফা কামাল নামের স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে নদী ভাঙনের শিকার হয়েছি। আমি নিজেও দুইবার ভাঙনের কবলে পড়ে বাড়িঘর হারিয়েছে। এখন আবার ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই জায়গায় যদি আবার বালুমহালের মাধ্যমে বালু তোলা হয় তাহলে আমাদের বাড়িঘর, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, ফসলিজমি সবকিছু নদীতে চলে যাবে। আমাদের দাবী কোনোভাবেই এখানে বালুমহাল ইজারা দেয়া যাবে না। এবং আমাদের স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে দেওয়া জন্য সরকারের প্রতি আকুল আবেদন করছি।
সালেহা বেগম নামের এক নারী বলেন, আমরা নদী ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি। এখন যদি আবার নদী থেকে বালু কাটে তাহলে আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। আমরা চাই নদীতে বালুকাটা যেন না হয়। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আপনারা আমাদের ভিটামাটি রক্ষায় এগিয়ে আসুন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ তারেক হাসান বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে একটি জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে বালুমহালের জন্য। আমরা জায়গাটি পরিদর্শন করবো। দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে নদীর কিছু জায়গায় বালুস্তুপ হয়ে গতির নদীপথ পরিবর্তন হয়ে অনেক অঞ্চল ভাঙনের শিকার হয়। যদি ওই স্থানে বালু তোলা হলে স্থানীয়দের ক্ষতি না-হয়, তাহলে আমরা সেভাবে বিষয়টির প্রতিবেদন জমা দিবো।
বিষয়টি নিয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনিন্দ্য মন্ডল বলেন, কাঁচি কাঁটায় পর্যাপ্ত বালু রয়েছে বলে মনে হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সকল ডিপার্টমেন্ট এটি মনে করেছে। এখন বালু থাকলে যে প্রক্রিয়ায় সরকার অপসারণ করে সেই লক্ষ্যে কাজ করবে। ওই অঞ্চলের যে অংশে বসতবাড়ি রয়েছে সেই জায়গাটিতে নদী বর্তমানে গভীর হয়ে ভাঙ্গন দেখা দিচ্ছে। সে লক্ষ্যে যে জায়গাটিতে ডুবোচর রয়েছে খনন হলে তাদের জন্য আরও ভালো।
বালুমহাল ইজারার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, বালুমহাল ইজারার ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে কাজ চলমান রয়েছে। এখন পর্যন্ত ফাইনাল হয়নি। বিভিন্ন দপ্তর থেকে রিপোর্ট নেয়া হচ্ছে। ফাইনাল রিপোর্ট পজিটিভ আসলে সেভাবেই কাজ করা হবে।
মানববন্ধন থেকে তিনটি প্রধান দাবি উত্থাপন করা হয়:
১. অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের ইজারা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে
২. পদ্মার তীরের কাঁচিকাটা অংশে জরুরি ভিত্তিতে স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে
৩. নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে
