গণতন্ত্রের বিজয়ের পথে যারা বাধা দেবে বাংলাদেশের মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে : আমীর খসরু

নির্বাচনের বিরুদ্ধের শক্তিকে কোনো জায়গা দেওয়া হবে না মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচনের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কিছু কিছু শক্তি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গণতন্ত্রের বিজয়ের পথে, জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার পথে আমরা এগিয়ে চলেছি। এই পথে যারা বাধা দেবে, বাংলাদেশের মানুষ আগামীতে তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।
গতকাল বুধবার (৬ আগস্ট) বিকেলে নগরীর নিউ মার্কেট মোড়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত কেন্দ্র ঘোষিত বিজয় র্যালী পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আমীর খসরু বলেন, আজকের বিশাল জনসভা-মিছিল প্রমাণ করেছে, বাংলাদেশের মানুষ ধানের শীষের পক্ষে, জাতীয়তাবাদী শক্তির পক্ষে, শহীদ জিয়ার সৈনিক, খালেদা জিয়ার সৈনিক। আমরা গণতন্ত্রের পথে চলেছি, বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ শুরু হয়েছে, এই পথই হচ্ছে দেশের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার পথ। গত ১৬ বছর ধরে আমরা প্রাণ দিয়েছি, গুম হয়েছি, নিপীড়িত হয়েছি-শুধু বাংলাদেশের মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। আজকের এই গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা-জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধারের যাত্রা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন সুস্থ রাজনীতি চায়, সহনশীল রাজনীতি চায়। পরস্পরের প্রতি সম্মান রেখে রাজনীতি করতে চায়। বিএনপি সেই রাজনীতিই শুরু করেছে। আমাদের সবার সেটি ধারণ করতে হবে।
আমীর খসরু বলেন, ১৭ বছরের আন্দোলনে আমরা সফলভাবে তারেক রহমানের নেতৃত্বে এগিয়ে যেতে পেরেছি। বারবার বলছি, বিএনপিতে কোনো বেয়াদবের জায়গা নেই। বেয়াদবি করলে পার্টিতে থাকতে পারবে না। ইতোমধ্যে ৫-৬ হাজার জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রয়োজনে দখলদার, চাঁদাবাজ, বিশৃঙ্খল কাউকেই জায়গা দেওয়া হবে না। সুশৃঙ্খল রাজনীতি শুরু করতে হবে। কোনো ‘ভাইয়ের’ রাজনীতি চলবে না-বিএনপির রাজনীতি করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা এখন নির্বাচনের সড়কে উঠেছি। ধানের শীষ বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের প্রতীক। জনগণ ধানের শীষের অপেক্ষায় আছে। তারেক রহমানের ফিরে আসার পথ চেয়ে আছে। লক্ষ লক্ষ জনতা আজ এখানে জমায়েত হয়েছে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় অংশ নিতে। এই যাত্রাকে সম্মান করতে হবে। কেউ যেন এ যাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
আমীর খসরু বলেন, আমাদের সজাগ থাকতে হবে। আমরা জানি, নির্বাচনের প্রসরা এসেছে, দেশবাসী স্বস্তিতে আছে, আনন্দে আছে। কিন্তু নির্বাচন শেষ করতে হলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে হাতে হাত মিলিয়ে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আগামী দিনগুলো চলতে হবে। যাতে কেউ নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে, গণতন্ত্রের প্রক্রিয়াকে, দেশের মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আজ থেকে শপথ নিতে হবে, সকলে যার যার এলাকায় যেতে হবে, মানুষের ঘরে ঘরে যেতে হবে। আগামী দিনের যে কর্মসূচি, রূপরেখা, দেশের মানুষের সকল রাজনৈতিক, সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার যে রূপরেখা বিএনপি তৈরি করেছে, তা মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে।
বিএনপির প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে তিনি বলেন, আগামী দিনে আমরা এক কোটি মানুষের চাকরি ১৮ মাসের মধ্যে দিব ইনশাআল্লাহ, সেই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। দেশের মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসা বিনামূল্যে দিব ইনশাআল্লাহ। আগামী দিনে দ্রব্যমূল্য কমিয়ে সাধারণ মানুষ যাতে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে, সেটারও শপথ আমরা নিয়েছি।
আমীর খসরু বলেন, দেশের মানুষ আগামী দিনে যে গণতন্ত্রের পথে চলবে, তার জন্য আমাদের অর্থনীতিতে গণতন্ত্রায়ণ করতে হবে। আমাদের অর্থনীতিতে সকলের সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে, এটাই হচ্ছে বিএনপির আগামী দিনের কর্মসূচি। তাই এখান থেকে আপনারা যার যার এলাকায় গিয়ে ধানের শীষের এ খবরগুলো, আগামী দিনে তারেক রহমানের নেতৃত্বে যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন আপনাদেরকে দেখাতে হবে। জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের সভাপতিত্বে ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন এবং মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শওকত আজম খাজার পরিচালনায় এতে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুন অর রশীদ, ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক আবু সুফিয়ান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী, তরিকুল ইসলাম তেনজিং। বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক ইদ্রিস মিয়া।
সমাবেশের পর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বিজয় র্যালীটি নিউ মার্কেট মোড় থেকে শুরু হয়ে কোতোয়ালি মোড়, লালদিঘী, বক্সি বিট, আন্দরকিল্লা মোড়, চেরাগি মোড় হয়ে প্রেসক্লাবের সামনে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।