চেতনানাশক খাইয়ে ১০ম শ্রেণির ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, প্রধান আসামী গ্রেপ্তার!

মেলায় ডেকে কোমল পানীয়র সাথে চেতনানাশক খাইয়ে বাড়িতে নিয়ে ১০ম শ্রেণির ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে ইউপি সদস্য, ঠিকাদারসহ চারজনের নামে মামলা করেছে ভুক্তভোগীর পিতা। মামলার প্রধান আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে মঙ্গলবার আদালতে পাঠায় পুলিশ। ভুক্তভোগী কিশোরীর বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের সাপখাওয়া এলাকায়। ঘটনার এক সপ্তাহ পর রোববার নাগেশ্বরী থানায় গণধর্ষণ মামলাটি রুজু হয়। আসামী হলেন, উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের গাগলা খামারটারী এলাকার আবু তালেবের ছেলে রাব্বী মিয়া, নাগেশ্বরী পৌরসভা এলাকার বাঁশেরতলের আনোয়ার হোসেনের ছেলে জুলহাস মিয়া, রায়গঞ্জ
ইউনিয়নের পূর্ব সাপখাওয়া এলাকার মৃত বাদর উদ্দিন ওরফে ঢোলার ছেলে শফিয়ার রহমান ওরফে শফি কন্ট্রাক্টর এবং রায়গঞ্জ ইউনিয়নের গাটিরখামার এলাকার মৃত খোকন মিয়ার ছেলে ইউপির ৭নং ওয়ার্ড সদস্য মোতালেব মিয়া। এরমধ্যে রাব্বী মিয়া গ্রেপ্তার হয়েছেন। নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল করিম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এজাহার উল্লেখ করা হয়, রাব্বী মিয়া ওই কিশোরীর জেঠাতো বোনের স্বামী। প্রায়ই কিশোরীকে অনৈতিক প্রস্তাব দিতো রাব্বী। এ নিয়ে রাব্বীকে সতর্ক করেন কিশোরী। গত ২৩ জুলাই কিশোরীকে নাগেশ্বরী ডিএম একাডেমী ফুটবল মাঠে হস্ত, বস্ত্র ও কুটির শিল্প মেলায় ডেকে আনে। ঘোরাঘুরির পর কোমল পানীয়র সাথে চেতনানাশক খাওয়ালে সে অচেতন হলে তার গাগলা খামারটারীর ফাঁকা বাড়ীতে নিয়ে সন্ধ্যায় ধর্ষণ করে। আবারও তাকে চেতনাশক খাওয়ায়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে নাগেশ্বরী থেকে দূরপাল্লার বাসে ঢাকায় অজানা উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেয়। সকালে ঢাকায় পৌঁছার পর বাসের সুপারভাইজার দেখতে পায় কিশোরী অচেতন। পরে তাকে বোনের বাসায় নেন সুপারভাইজার। রাতে ফিরতি বাসে নাগেশ্বরী পাঠায় দেন। পরদিন সকালে নাগেশ্বরী বাসস্ট্যান্ডে বাস থেকে নামলে রাব্বী, জুলহাস ও মোতালেব মেম্বার জোর করে পৌরসভার হাসেম বাজার এলাকার ফারুক হোসেনের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানেও তাকে ধর্ষণ করে রাব্বী। আবারও তাকে চেতনানাশক খাওয়ানো হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় অচেতন কিশোরীকে নাগেশ্বরী বাসস্ট্যান্ড এনে জুলহাসের হাতে তুলে দেয় রাব্বী। অটোরিক্সায় করে রায়গঞ্জ বোর্ডের বাজারের পাশে শফিয়ারের আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে কিশোরীকে শফিয়ার ও মোতালেব মেম্বার রাতভর পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ ঘটনা কাউকে জানালে তাকে খুনের হুমকী দেন তারা। ভোরে কিশোরীকে বাড়ি থেকে বের করে দেন ধর্ষকরা। পরে নানার বাড়িতে যায় কিশোরী। কিন্তু পাঁচদিন পর নাগেশ্বরী হাসপাতালে ভর্তি হতে গেলে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসক। থানায় অভিযোগ করলে ৩ আগষ্ট মামলা নেয় পুলিশ। বাকি আসামীরা পলাতক থাকায় তাদের পাওয়া যায়নি। মামলার বাদী কিশোরীর বাবা বলেন, আমি আসামীদের কঠিন বিচার চাই। সব আসামীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচার চাই। এক সপ্তাহ পরে থানায় অভিযোগের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৮দিন আমার
মেয়ে কথা বলতে পারেনি। অচেতন ছিল। ও না বললে কার নামে মামলা করি। ঘটনা শুনে থানায় গেছি। বাড়ি ফেরার ৫দিন পর হাসপাতালে ভর্তির বিষয়ে জানতে চাইলে জানান, বাংলা ডাক্তার (স্থানীয় চিকিৎসক) দিয়ে চিকিৎসার পর বেশি অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেন মেয়েকে। রায়গঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান মন্ডল দ্বীপ বলেন, এটি ঘুণ্য জঘন্ন অপরাধ হয়েছে। এতে ইউপি সদস্য জড়িত থাকুক বা যে কেউ থাকুক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাচ্ছি। আমার চাওয়া, ইউনিয়নের সকল মানুষ নিরাপদে থাকুক। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ থাকবে সঠিক তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করবে। মামলার তদন্তকারী কর্মকমর্তা নাগেশ্বরী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রহিম জানান, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে (মঙ্গলবার) আসামীকে জেলে পাঠানো হয়েছে। জোর তদন্ত চলছে। ঘটনা নিয়ে অনেক কিছু জানা যাচ্ছে। নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল করিম জানান, মামলার প্রধান আসামী রাব্বি মিয়াকে গ্রেপ্তার আছে। ওসি বলেন, ভুক্তভোগী কয়েকদিন পর থানায় অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ পাওয়ার পরই তদন্ত করে মামলা নেয়া হয়েছে। এখনও তদন্ত চলছে।