বিজিএমইএ নির্বাচন আজ : ভোটের লড়াইয়ে মুখোমুখি সম্মিলিত পরিষদ-ফোরাম

দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব দিতে আজ ভোটের মাঠে লড়াইয়ে নামছে দুই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ‘সম্মিলিত পরিষদ’ ও ‘ফোরাম’। আজ শনিবার দেশের পোশাক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ২০২৫-২০২৭ মেয়াদের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনে তারা মুখোমুখি হচ্ছে।
উৎসবমুখর পরিবেশে ঢাকা ও চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু হোটেলে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সংগঠনটির ভোট অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করে একটি স্মার্ট ও ফিউচার ফিট বিজিএমইএ গঠন করতে চায় সম্মিলিত পরিষদ। এছাড়া একটি বাস্তবভিত্তিক, সময়োপযোগী এবং সদস্যদের অংশগ্রহণে গঠিত রোডম্যাপ নিয়ে কাজ করতে চায় সম্মিলিত পরিষদ।
অন্যদিকে, নির্বাচনে জয়লাভ করে একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও কর্মক্ষম বিজিএমইএ গড়তে চায় ফোরাম। পাশাপাশি শ্রমশক্তিকে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে কাজ করবে ফোরাম। এছাড়া এসএমই ও নন-বন্ডেড শিল্পখাতকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান, রুগ্ন শিল্পের জন্য একটি বিস্তারিত এক্সিট পলিসি প্রণয়ন এবং বৈশ্বিক ট্যারিফ যুদ্ধ মোকাবেলায় সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন নেতৃবৃন্দ। নির্বাচনে এবার ৩৫ পরিচালক পদে লড়ছেন ৭৬ জন প্রার্থী। নির্বাচনকেন্দ্রিক দুই জোট ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ছয়জন। তবে মূল লড়াই হবে দুই প্যানেলের মধ্যেই। নির্বাচনে এবার ভোটার এক হাজার ৮৬৪ জন। এর মধ্যে ঢাকার ভোটার এক হাজার ৫৬১ এবং চট্টগ্রামের ভোটার ৩০৩ জন।
এবার গত নির্বাচনের তুলনায় ভোটার কমেছে ৬৩২ জন। গতবছরের মার্চে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোটার ছিল দুই হাজার ৪৯৬ জন। সেই নির্বাচনে ভুয়া ভোটার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর এবার নির্বাচনে গত নির্বাচনের তুলনায় ভোটার কমে যায়। এবারের নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আবুল কালাম। অন্যদিকে, ফোরামের দলনেতা হাসান খান বাবু।
সম্মিলিত পরিষদের প্রার্থী যারা:
এই প্যানেলের ঢাকা অঞ্চলের প্রার্থীরা হলেন- বিজিএমইএর সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ হিল রাকিব, বিজিএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি আসিফ আশরাফ, বিজিএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি মো. মশিউল আজম, মুস্তাজিরুল শোভন ইসলাম, ফিরোজ আলম, মোহাম্মদ সোহেল সাদাত, সৈয়দ সাদেক আহমেদ, মো. আশিকুর রহমান (তুহিন), মো. নুরুল ইসলাম এবং মো. শাহাদাত হোসেন।
অন্যপ্রার্থীরা হলেন- মো. মহিউদ্দিন রুবেল, মো. রেজাউল আলম মিরু, মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, সাইফুদ্দিন সিদ্দিকী সাগর, আবরার হোসেন সায়েম, তামান্না ফারুক থিমা, মির্জা ফাইয়াজ হোসেন, হেলাল উদ্দিন আহমেদ, লিথি মুনতাহা মহিউদ্দিন, একেএম আজিমুল হাই এবং মঞ্জুরুল ফয়সাল হক। এছাড়া রয়েছেন- এসএম মনিরুজ্জামান এবং মো. রাশেদুর রহমান।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রার্থীদের মধ্যে আছেন প্যানেল নেতা এসএম আবু তৈয়ব। অন্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন- বিজিএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী, মোহাম্মদ মুসা, পরিচালক অঞ্জন শেখর দাস, পরিচালক নাফিদ নাবি, সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, মোস্তফা সারোয়ার রিয়াদ, মো. আবসার হোসেন এবং গাজী মো. শহীদ উল্লাহ।
ফোরামের প্রার্থী যারা:
ফোরামের ঢাকা অঞ্চলের প্রার্থীরা হলেন- মাহমুদ হাসান খান (বাবু), মোহাম্মদ আবদুস সালাম, কাজী মিজানুর রহমান (পিন্টু), মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী, ইনামুল হক খান (বাবলু), মো. হাসিব উদ্দিন, মোহাম্মদ সোহেল, শেখ হোসেন মোহাম্মদ মোস্তাফিজ, ভিদিয়া অমৃত খান ও মোহাম্মদ আব্দুর রহিম (ফিরোজ)। ঢাকা অঞ্চলে আরও রয়েছেন- শাহ রাঈদ চৌধুরী, মিজানুর রহমান, মোহাম্মদ হোসনে কমার আলম, এবিএম সামছুদ্দিন, নাফিস উদ দৌলা, মিসেস সুমাইয়া ইসলাম, আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, মজুমদার আরিফুর রহমান, মোজাম্মেল হক ভুঁইয়া, ফাহিমা আক্তার, আসেফ কামাল পাশা, ড. রশিদ আহমেদ হোসাইনী, রুমানা রশীদ, সামিহা আজিম, মো. রেজোয়ান সেলিম ও ফয়সাল সামাদ।
এই প্যানেলের চট্টগ্রামের প্রার্থীরা হলেন- সেলিম রহমান, মোহাম্মদ সাইফ উল্যাহ মানসুর, মোহাম্মদ রফিক চৌধুরী, মো. এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সাকিফ আহমেদ সালাম, এনামুল আজিজ চৌধুরী, মো. এমদাদুল হক চৌধুরী, মীর্জা মো. আকবর আলী চৌধুরী ও রিয়াজ ওয়াইজ।
সম্মিলিত পরিষদের নির্বাচনী ইশতেহার:
সম্মিলিত পরিষদের নির্বাচন উপলক্ষে ঘোষিত ১২ দফা নির্বাচনী ইশতেহারে রয়েছে- এসএমই সহায়তা সেলের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য কাঠামোগত, আর্থিক ও নীতিগত সহায়তা দেওয়া হবে। এটি হবে একটি পরামর্শ ও সংস্কারকেন্দ্র; কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার ও সেবা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় এবং সংকটময় সময়ে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা; শ্রমিক, তত্ত্বাবধায়ক ও ব্যবস্থাপকদের ডিজিটাল দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি; একটি গ্রিন ফান্ডিং ডেস্ক গঠন এবং সুদের হার এক অঙ্কে আনার দাবিতে নীতিগত তদবির; ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে নতুন রপ্তানি গন্তব্য অনুসন্ধান করা; এলডিসি উত্তরণের পর বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য স্মার্ট রাজস্ব ব্যবস্থা ও সহায়তা কাঠামো গঠন; কাস্টমস, ভ্যাট ও বন্ড ব্যবস্থা সহজ করা এবং পোশাক খাতে গ্রিন চ্যানেল চালুর উদ্যোগ; ওয়ানস্টপ রপ্তানি সহায়তা সেল প্রতিষ্ঠার মাধ্যেমে বিশেষ করে এসএমই ও নারী নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানের জন্য কারিগরি সহায়তা ও বাণিজ্যিক বুদ্ধিমত্তা নিশ্চিত করা; আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে ইউনিফাইড কোড অব কনডাক্ট প্রণয়ন; সবুজ রূপান্তরের জন্য কাঠামোগত কর্মপরিকল্পনা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা; নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের জন্য নেতৃত্ব বিকাশ ও পরামর্শমূলক সহায়তা এবং বিজিএমইএ’র প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, প্রযুক্তি ও সেবার মানোন্নয়ন করা হবে।
ফোরামের নির্বাচনী ইশতেহার:
নির্বাচন উপলক্ষে ফোরামের ১৪ দফা ইশতেহারের মধ্যে রয়েছে- পোশাক শিল্পের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন, নতুন বাজার সম্প্রসারণ, অঞ্চলভিত্তিক সংকট ব্যবস্থাপনা সেল গঠন, ক্রেতাদের অযৌক্তিক চাপের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া হবে এবং ক্রেতাদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্য আদায়ের ব্যবস্থা করা হবে।
প্রসঙ্গত, বিজিএমইএতে নির্বাচনকেন্দ্রিক দুটি প্যানেল- ‘ফোরাম’ ও ‘সম্মিলিত পরিষদ’। এই দুই প্যানেল থেকেই নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়ে থাকে। গতবছরের মার্চে বিজিএমইএ’র পরিচালনা পর্ষদের (২০২৪-২৬) নির্বাচনে সবকটি পদে জয়লাভ করে সম্মিলিত পরিষদ।
