লঞ্চঘাটে তরুণীকে মারধরের ঘটনায় যুবক আটক

মুন্সীগঞ্জে যাত্রাবিরতি করা পিকনিকের একটি লঞ্চের দুই তরুণীকে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনায় নেহাল আহমেদ জিহাদ (২৬) নামে এক যুবককে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে।
শনিবার (১০ মে) দুপুর দেড়টার দিকে ওই যুবককে আটক করে সদর থানা পুলিশ। পুলিশ হেফাজতে নেওয়া নেহাল আহমেদ জিহাদ সদর উপজেলার দক্ষিণ ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। নৌভ্রমণে বের হয়ে আক্রমণের শিকার ওই লঞ্চটির নাম ’এমভি ক্যাপ্টেন’। পুলিশ বলছে মারধরের শিকার ওই দুই তরুণীর বয়স ১৯-২০ বছর হবে। তারা নৌভ্রমণে যাওয়া লঞ্চে ডিজে নাচ করে। এদিকে দুই তরুণীকে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। সে ভিডিওতে দেখা যায়, দুই তরুণীকে লঞ্চের একেবারে সামনের অংশে উঠিয়ে বেল্ট দিয়ে পেটাচ্ছেন এক তরুণ। এসময় স্থানীয় মানুষ জন সেই দৃশ্য তাঁদের মোবাইল ফোনে ধারণ করে উল্লাস করছেন ও বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।
এ ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে মারধরের ঘটনার পক্ষে-বিপক্ষে মন্তব্য করছেন নেটিজিনরা।
অভিযোগের বিষয়ে নেহাল আহমেদ জিহাদ বলেন, স্থানীয় কয়েকশো মানুষ তরুণীদের আচরণ ও বেশভূষায় ক্ষিপ্ত হয়। তরুণীদের উপর আক্রমণ করতে চলে আসে। ক্ষিপ্ত জনতা ঐ তরুণীদের লঞ্চ থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ হয়। সে সময় ভুক্তভোগী কয়েকজন তরুণী আমাকে অনুরোধ করে, আমি যেন তাদেরকে এমন পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, লঞ্চটি যখন ঘাটে থেমেছিল তখন অনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং মাদক সেবনের কারণে স্থানীয় জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
সম্পূর্ণ লঞ্চে ভাঙচুর চালানোর চেষ্টা করে ক্ষুব্ধ জনতা। সেই সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় থাকা তরুণ-তরুণীদের মারধর করার চেষ্টা করে। এমনকি কয়েকজন তরুণ অশালীন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকা এক তরুণীকে কোলে তুলে লঞ্চ থেকে ফেলে দেওয়ার জন্য মন স্থির করেছিল। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম বলেন, শুক্রবারের ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মারধরের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়।
সে ঘটনার প্রেক্ষিতে আমরা জিহাদকে থানায় আসতে বলি। সে থানায় চলে আসে। আমরা তাকে জিঙ্গাবাদ করছি। তিনি আরও বলেন, ২০০-৩০০ জন ভ্রমনকারী যাত্রী নিয়ে শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে ওই লঞ্চটি রওনা করে। তারা প্রথমে রাজধানীর সদর ঘাটে অবস্থান নেয়। সন্ধ্যার দিকে সেখান থেকে চাঁদপুরের মোহনপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে সদরঘাট থেকে ছেড়ে আসে লঞ্চটি। পথিমধ্যে পিকনিকের চাঁদা দেওয়া নিয়ে ওই যাত্রীদের মধ্যে কিছুটা ঝামেলার সৃষ্টি হয়। তাঁরা রাত ৮টার দিকে নাস্তা নেওয়ার জন্য মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে লঞ্চটি থামায়।
ওসি বলেন, সে সময় ওই লঞ্চের কয়েকজন তরুণ-তরুণীকে স্থানীয় জনতা মাদকাসক্ত অবস্থায় দেখতে পায়। পরবর্তীতে তাঁরা লঞ্চের ভেতরে গিয়ে তল্লাশি চালায়। সে সময় আপত্তিকর অবস্থায় কেবিনের মধ্যে কয়েকজন তরুণ-তরুণীকে দেখতে পায় তারা। এতে স্থানীয় জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে লঞ্চে ভাঙচুর করে। সেইসঙ্গে যারা আপত্তিকর অবস্থায় ছিল তাদেরকে মারধর করে। ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই আমরা ঘটনাস্থলে যাই এবং পরিস্থিতি শান্ত করে লঞ্চটিকে ঢাকার দিকে ফিরিয়ে দেই।