“নিপীড়নের কাছে মাথা নোয়াব না”—জুলাই ঘোষণাপত্রে বললেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “আজ আমরা কেবল অতীত স্মরণ করতে আসিনি, এসেছি একটি শপথ নিতে—শপথ এই, আমরা কোনো ধরনের নিপীড়নের কাছে মাথা নোয়াব না। আমরা প্রতিষ্ঠা করব একটি জবাবদিহিমূলক, মানবিক, গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র।”
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে দেশজুড়ে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেওয়া ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
“জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেব না”
ড. ইউনূস বলেন, “আমরা স্মরণ করছি এমন এক দিন, যা এ দেশের ইতিহাসে গভীর ছাপ রেখেছে। ৫ আগস্ট শুধু একটি দিবস নয়, এটি গণজাগরণের উপাখ্যান, একটি নতুন পথচলার সূচনাবিন্দু। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও মানুষ যখন সুবিচার ও গণতন্ত্র থেকে বঞ্চিত, তখন ২০২৪ সালের জুলাই ছিল পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ।”
তিনি স্মরণ করেন, কীভাবে একটি স্বৈরশাসক সরকার ১৬ বছর ধরে রাষ্ট্রযন্ত্রকে করেছিল মাফিয়াতন্ত্রের হাতিয়ার—চাকরিতে ঘুষ, কোটা নামে বৈষম্য, আন্দোলনে গুলি, এবং মতপ্রকাশে গ্রেপ্তার-গুম।
“যে তরুণ ঘুষ দিতে পারেনি, মাফিয়ার সঙ্গে সখ্য করেনি, তার চাকরি হয়নি। ন্যায় ও স্বপ্নচ্যুত এই তরুণ প্রজন্মই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছে।”
"বিচারহীনতা আর চলবে না"
ড. ইউনূস বলেন, “অভ্যুত্থানের সময় দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে, হাসপাতালে আহতদের ভর্তি করতে না দিয়ে, তথ্য গোপন করে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল। বহু মানুষ দৃষ্টি হারিয়েছে, পঙ্গু হয়েছে। এটা ক্ষমতায় থাকার জন্য নির্মমতার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত।”
তিনি জানান,
১. ৮৩৬ শহীদ পরিবারের মধ্যে ৭৭৫টি পরিবারকে ইতোমধ্যে ৯৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও ভাতা প্রদান করা হয়েছে।
২. ১৩,৮০০ জন আহত ‘জুলাই যোদ্ধা’কে তিনটি ক্যাটাগরিতে ১৫৩ কোটি ৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।
৩. ৭৮ জন গুরুতর আহত ব্যক্তিকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যার জন্য ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
৪. সব সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে আহতদের জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিক বিনামূল্যে চিকিৎসা চালু রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “শুধু পুরোনো শাসকের পতন নয়, তাদের তৈরি করা দুর্বৃত্তপনা, লুণ্ঠন-ভিত্তিক রাজনীতি ও রাষ্ট্রযন্ত্র ভেঙে ফেলতেই হবে। এই শাসনব্যবস্থায় আইন, বিচার, গণমাধ্যম, সংস্কৃতি—সব জায়গায় সুবিধাভোগী শ্রেণির তৈরি হয়েছিল। আমরা সেই ধারা ভেঙে একটি নতুন রাষ্ট্র নির্মাণে অঙ্গীকারবদ্ধ।”
ড. ইউনূস বলেন, “জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগ তখনই সার্থক হবে, যখন আমরা বৈষম্যহীন, মানবিক রাষ্ট্র নির্মাণ করবো। আজকের এই দিনে আমাদের শপথ হোক—কোনো নিপীড়নের কাছে মাথা নোয়াব না। আমরা একটি জবাবদিহিমূলক, কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গড়বো।”