গাজা দখলে ইসরায়েলকে ‘সবুজ সংকেত’, ট্রাম্প বললেন— “সিদ্ধান্ত তাদেরই”

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ড পুরোপুরি দখলের পরিকল্পনায় ইসরায়েল এগোলে, তাতে কোনো আপত্তি থাকবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গাজা দখলের বিষয়ে সরাসরি মত না জানিয়ে মূলত সিদ্ধান্তের ভার তুলে দিয়েছেন ইসরায়েলের কাঁধে।
বুধবার (৬ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “বাকি বিষয়গুলো সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারি না। এটা মূলত ইসরায়েলের ওপর নির্ভর করছে।” তিনি আরও বলেন, “গাজার মানুষের খাবার, সেটাই আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”
ট্রাম্পের এই বক্তব্য এমন সময় এলো, যখন গাজার ৮৬ শতাংশ এলাকা ইতোমধ্যেই ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সামরিক জোন ঘোষণা করে নিয়েছে এবং সেখানে একের পর এক বাধ্যতামূলক উচ্ছেদ চলছে। ফিলিস্তিনিরা এখন গাজার সীমিত কিছু এলাকায় গাদাগাদি করে মানবেতর জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন।
গাজা এখন বোমা হামলা, চরম খাদ্যসংকট ও স্বাস্থ্যসেবার অভাবে বিপর্যস্ত। এই পরিস্থিতিতে বাকি জায়গাগুলোতেও যদি সামরিক অভিযান চালানো হয়, তবে তা পুরো অঞ্চলকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তা মিরোস্লাভ ইয়েনচা মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, “গাজা পুরোপুরি দখলের চেষ্টা বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আন্তর্জাতিক আইন স্পষ্টভাবে বলে— গাজা ভবিষ্যতের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। গাজাকে সেভাবেই থাকতে হবে।”
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকেই সেনা মোতায়েন, অবকাঠামো ধ্বংস এবং ফিলিস্তিনি উচ্ছেদ প্রকল্প নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু একাধিকবার বলেছেন, গাজা “ফিলিস্তিনিশূন্য” করা হবে—যা অনেক বিশ্লেষকের মতে, জাতিগত নির্মূলেরই ঘোষণা।
সেই পরিকল্পনায় ট্রাম্পের আগেও সমর্থন ছিল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক বক্তব্যে তিনি বলেন, গাজা ফাঁকা করে সেখানে “মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা” তৈরি করা যেতে পারে।
গাজার বর্তমান অবস্থা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে যে উদ্বেগ, তার একটি বড় কারণ হলো সেখানে এখনো বহু ইসরায়েলি নাগরিক বন্দি আছেন বলে মনে করা হচ্ছে, যারা হামাস ও অন্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর হেফাজতে রয়েছেন।
গত মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) ট্রাম্প দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজায় ৬ কোটি ডলার মানবিক সহায়তা দিয়েছে। এর মধ্যে জিএইচএফ (GHF)-কে দেওয়া হয়েছে ৩ কোটি ডলার। তিনি বলেন, “খাবারই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গাজার মানুষ যে চরম দুরবস্থায় আছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ইসরায়েল এই খাবার বিতরণে সহায়তা করবে এবং আরব দেশগুলোকেও এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে।
২০০৫ সালে ইসরায়েল গাজা থেকে সেনা ও বসতি প্রত্যাহার করলেও, আকাশপথ, পানিসীমা ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে রেখে কার্যত অঞ্চলটি অবরুদ্ধ রেখেছে। আইনবিদদের মতে, এটিই ‘কার্যত দখল’ হিসেবে বিবেচিত।
তবে ২০২৩ সালের যুদ্ধ পরিস্থিতির পর ইসরায়েলের ডানপন্থি জোট আবারও সেখানে স্থায়ী বসতি ও সামরিক উপস্থিতির পক্ষে জনমত গড়ে তুলছে।
এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা দখল নিয়ে এই নির্লিপ্ত অবস্থান আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।