আস্থায় বাজিমাত ইসলামী ব্যাংক

৭ মাসে নতুন গ্রাহক হিসাব সোয়া ১৮ লাখ।
২৪ হাজার কোটি টাকার নতুন আমানত।
মোট আমানত ১ লাখ ৬৬ হাজার কোটি।
আগস্টের পর দেশের ব্যাংকিং খাতে যখন একের পর এক সংকটের ঢেউ ওঠে, তখন অনেক ব্যাংক টিকিয়ে রাখতে পারেনি গ্রাহকের আস্থা। নগদ অর্থসংকটে হিমশিম খায় একাধিক বেসরকারি ব্যাংক বিশেষ করে শরিয়াহভিত্তিক কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। কোথাও চেক বাতিল, কোথাও দীর্ঘ লাইন—অনেকে নিজের জমানো টাকায় হাত দিতে পারছিলেন না। এই অস্থির সময়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি দাঁড়িয়ে ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মেরুতে। অনড়, স্বচ্ছ ও আত্মবিশ্বাসী এক প্রতিষ্ঠানের পরিচয়ে।
গত সরকারের সময় দুর্নীতির অভিযোগ ও অর্থ পাচারের বিতর্কের পর যে আস্থার ফাটল তৈরি হয়েছিল ইসলামী ব্যাংক ঘিরে, নতুন সরকারের অধীনে সেই ফাটল পরিণত হয়েছে বিশ্বাসের ভিত্তিতে। ব্যাংকটির হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, গত সাড়ে সাত মাসে (২৭ আগস্ট ২০২৪ থেকে ১৬ এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত) তাদের নতুন গ্রাহক বেড়েছে ১৮ লাখ ২৬ হাজার ৬৫২ জন। নতুন আমানত এসেছে ২৪ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। দেশের ব্যাংক খাতে যখন গতি নেই, তখন এ প্রবৃদ্ধি শুধু ব্যতিক্রম নয়, বরং নজিরবিহীন। হিসাব খুলেছে সবচেয়ে বেশি মুদারাবা টার্ম ডিপোজিটে—৩ লাখ ৭০ হাজার ৭৮২টি নতুন এমটিডিআরএ অ্যাকাউন্টে জমেছে ১৭ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা। মুদারাবা সঞ্চয়ী, স্পেশাল সেভিংস, হজ, বিবাহ ও শিক্ষার্থী হিসাবেও জমা পড়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। নতুন হিসাব ও আমানতের এই জোয়ারে ব্যাংকটির মোট আমানত এখন ১ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
এ প্রবণতা শুধু একটি ব্যাংকের সাফল্যগাথা নয়, বরং ব্যাংকিং আস্থার মানচিত্রে নতুন এক মোড়। এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো এম হেলাল আহমেদ জনি বলেন, আগের সরকারের সময় ইসলামী ব্যাংকসহ কিছু শরিয়াহ ব্যাংকে এস আলম গ্রুপ দখল নিয়ে অর্থ পাচার করে। সরকার বদলের পর সে অনিয়ম বন্ধ হয়েছে, আস্থা ফিরেছে। এমন সময় ১৮ লাখ নতুন হিসাব শুধু একক সফলতা নয়, গোটা খাতের জন্য স্বচ্ছতার বার্তা।
ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান নেটওয়ার্ক ও কার্যক্রম অনেক বিস্তৃত। দেশে ব্যাংকটির ৪০০টি শাখা, ২৬৫ উপশাখা, ২ হাজার ৭৮৩টি এজেন্ট আউটলেট এবং ৩ হাজার ৪০ এটিএম ও সিআরএম বুথ রয়েছে। এ ব্যাংকের গ্রাহকের সংখ্যা ২ কোটি ৫০ লাখ ছাড়িয়েছে। ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রেও ব্যাংকটি এগিয়ে। সেলফিন অ্যাপের ব্যবহারকারী ৪৭ লাখ ছাড়িয়েছে।
রেমিট্যান্স, বাণিজ্য ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগেও ইসলামী ব্যাংক রেখেছে দৃঢ় অবস্থান। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকটি ৬৭ হাজার কোটি টাকার বেশি রেমিট্যান্স আহরণ করেছে। আমদানি ও রপ্তানিতে অংশ নিয়েছে যথাক্রমে ৬৫ হাজার ৭৮২ কোটি ও ৩৩ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকায়। এ ছাড়া ৩৪ হাজার গ্রামে ১৮ লাখ পরিবারকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগের মাধ্যমে সহায়তা দিয়ে ব্যাংকটি প্রায় ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির দাবি করেছে।
ইসলামী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওমর ফারুক খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ব্যাংকটি সঠিক পথে ফিরেছে। গ্রাহকের আস্থা ফিরে এসেছে, যা ১৮ লাখ নতুন হিসাব ও ২৪ হাজার কোটি টাকার নতুন আমানতেই প্রমাণিত। তাঁর ভাষায়, ‘কঠিন সময়ে ব্যাংকের প্রতি এই আস্থা ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি।’