ঈদে নানা বাড়ি বেড়াতে এসে পুকুরে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সুখছড়ি গ্রামে নেমে এসেছে শোকের কালো ছায়া। ঈদের অনাবিল আনন্দ নিমেষেই পরিণত হয়েছে বুকফাটা আর্তনাদে। শুক্রবার (৪ এপ্রিল) সুখছড়ি গ্রামের সাইরা পাড়ায় নানাবাড়ির পুকুরে ডুবে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে দুই নিষ্পাপ ভাই-বোনের। এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় পুরো এলাকা স্তব্ধ, আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে স্বজনদের কান্নায়।
নিহত দুই শিশু হলো, ফারিহা জান্নাত তানজুম (৮) এবং মো. তানজমুল হোসেন রাফি (৭)। তারা একই এলাকার কামার দীঘির পাড়ের নতুন পাড়ার বাসিন্দা ও সৌদি প্রবাসী হাসান পারভেজের সন্তান। স্থানীয় একটি নুরানী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিল এই দুটি শিশু।
ঈদের ছুটি কাটাতে গত বুধবার মা তাসলিমার হাত ধরে তারা এসেছিল সুখছড়িতে, নানার বাড়ির অফুরন্ত স্নেহের ছায়ায়। কে জানতো, এই আসাই হবে তাদের শেষ আসা! শুক্রবার দুপুরে যখন বাড়ি জুড়ে ঈদের আমেজ, হয়ত বা সবার অলক্ষ্যেই দুই ভাই-বোন মিলে খেলতে খেলতে চলে গিয়েছিল বাড়ির পাশে থাকা পুকুরপাড়ে। হয়তো পুকুরের শীতল পানিতে গা ভেজানোর লোভ সামলাতে পারেনি তারা। কিন্তু সেই পানিই যে কেড়ে নেবে দুটি তাজা প্রাণ, তা কেই বা ভেবেছিল!
কিছুক্ষণ পর থেকেই তানজুম আর রাফিকে দেখতে না পেয়ে উৎকণ্ঠা শুরু হয় পরিবারে। বাড়ির আশপাশ, আনাচে-কানাচে তন্নতন্ন করে খুঁজেও মেলেনি তাদের। এক অজানা আশঙ্কায় ভারী হয়ে ওঠে সকলের মন। অবশেষে সন্দেহ গিয়ে পড়ে পাশের পুকুরটির ওপর। স্বজন ও স্থানীয়রা মিলে পুকুরে নেমে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। কিছুক্ষণ পরই নিথর অবস্থায় উদ্ধার করা হয় দুই ভাই-বোনের মরদেহ।
দ্রুত তাদের নিয়ে যাওয়া হয় লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই ঈদের আনন্দের রেশটুকুও মুছে গিয়ে পুরো এলাকায় নেমে আসে গভীর শোকের ছায়া। প্রবাসী বাবার আদরের দুই সন্তান, মায়ের নয়নের মণি তানজুম আর রাফির এমন আকস্মিক মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না স্বজন ও এলাকাবাসী। তাদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। যে বাড়ি ঈদের আনন্দে মুখর ছিল, সেই বাড়ি এখন কান্নার রোল আর বিষাদের প্রতিচ্ছবি।