আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ নিয়ে যা বলছেন নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। শনিবার (১০ মে) রাতে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকে দেশজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও, নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা গেছে উচ্ছ্বাস। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলটিকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করার দাবি করছে শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ গার্ডিয়ানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি কাউসার আহমেদ সঙ্গে কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী।

সর্দার মাহমুদুল হাসান দূর্জয়

বাংলা বিভাগ, নোবিপ্রবি

আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিস্ট সংগঠন।

এই দলটি বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করে দীর্ঘদিন ধরে লুটপাট, গুম, খুন, নিপীড়নের শাসন কায়েম করেছে। দেশ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর ও জুলাই গণহত্যার নেতৃত্ব দেয় তারা। মানবতা ও গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত।

কিন্তু বর্তমান সরকারের কার্যক্রমে সেই প্রত্যাশিত বিচারের কোনো প্রতিফলন নেই। নয় মাসেও আওয়ামী লীগের কোনো দৃশ্যমান বিচার সম্পন্ন হয়নি। চিহ্নিত খুনি, সন্ত্রাসী, লুটেরাদের না তারা আটক করতে পেরেছে, না করেছে। বরং দুই দিন আগে, আন্দোলনের উত্তাপে যখন সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করল, তখন দেখা গেল রাষ্ট্রপতির যোগসাজশে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা নিরাপদে দেশ ছাড়ছে।

এই নিষিদ্ধ ঘোষণাটি যতটা মুখরোচক, তার চেয়েও বেশি প্রতারণামূলক। কারণ, আওয়ামী লীগকে কোনো বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে না এনে শুধুমাত্র নির্বাহী সিদ্ধান্তে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা — এটি কার্যত একটি ইনডেমনিটি। প্রশ্ন উঠছে, ৫ তারিখের পর কি সত্যিই আওয়ামী লীগের কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান নেই? নাকি এটিও একটি সাজানো নাটক?

এই পুরো প্রক্রিয়াটি স্পষ্টভাবে বোঝায়, আওয়ামী লীগকে বিচারের মুখোমুখি না এনে বরং নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এভাবে নিষিদ্ধ করার পদ্ধতি শেখ হাসিনার জামায়াত নিষিদ্ধের কৌশলের অনুরূপ — যেখানে বিচার নয়, বরং রাজনৈতিক স্বার্থই বড় ছিল।

ফলে, এটিকে আমরা "বিচারের প্রতিশ্রুতি" নয়, বরং আরেকটি ধাপ্পাবাজি বলেই বিবেচনা করি।

এমনটি মনে হয়, সরকার আদতেই চায় না আওয়ামী লীগের প্রকৃত বিচার হোক। আর সে কারণেই আওয়ামী লীগের বিচার প্রক্রিয়ায় এই সরকারের আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ।

মো. মেহেদী হাসান

ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগ

বাংলাদেশের ইতিহাসে আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচিত হয়েছে—আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার মনে যেমন গভীর ভাবনা জাগিয়েছে, তেমনি দীর্ঘদিন ধরে দেখা অন্যায়, অপশাসন ও জবাবদিহিহীনতার অবসানের একটি প্রতীক বলেও বিবেচিত হচ্ছে।

২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের ছায়ায় সেনা অফিসারদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা, ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে শতাধিক প্রাণহানি, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের নামে জনগণের ভোটাধিকার হরণ, ২০২৪ সালের প্রহসনের নির্বাচন এবং একই বছরের জুলাইয়ে নিরস্ত্র মানুষের ওপর চালানো গণহত্যা—সবকিছু মিলে আওয়ামী লীগের অপশাসনের চিত্র স্পষ্ট।

এছাড়াও বিগত এক যুগে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, রাজনৈতিক নিপীড়ন এবং নারী ও সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বরতা যেন একটি নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বিচার ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত করে ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার’ এর নামে বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের যে বিচারিক হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে, তা কোনোভাবেই সভ্যতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয় না।

এই দলটি রাষ্ট্রকে দলীয় করণের মাধ্যমে একনায়কতান্ত্রিক ধারায় ঠেলে দিয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে তাদের নিষিদ্ধ হওয়া কোনো প্রতিহিংসার ফল নয় বরং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রাষ্ট্র গঠনের এক সাহসী পদক্ষেপ।

আমি আশা করি, এই নিষেধাজ্ঞা ভবিষ্যতে সব রাজনৈতিক দলের জন্য একটি বার্তা হয়ে থাকবে—ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, জনগণের ওপর অন্যায়-অবিচার করে কেউ শেষ পর্যন্ত রক্ষা পায় না। দেশ যেন এখন থেকে একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও জবাবদিহিমূলক শাসন ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যায়, সেটিই আমার আন্তরিক প্রত্যাশা।

কাউসার আহমেদ 

অর্থনীতি বিভাগ

আওয়ামিলীগ নিষিদ্ধের জন্য গত বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে যমুনার সামনে পরবর্তীতে শাহবাগে ছাত্রজনতার আন্দোলনের সাথে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের সংহতিমূলক অংশগ্রহণ ছিল সকল ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সীসা ঢালা প্রাচীরের মতো টেকসই প্রতিবাদ।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া নুতন বাংলাদেশে গুম খুন সন্ত্রাসকাণ্ডে জড়িত সন্ত্রাসী সংগঠন আওয়ামীলীগের রাজনীতি করার বিন্দুমাত্র সুযোগ থাকে না। এজন্য সকল ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিচারের মধ্য দিয়ে নিষিদ্ধের ডাকে আপামর ছাত্রজনতা বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করে। জুলাই এর স্পিরিট নিয়ে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরাও এতে সংহতি প্রকাশ করতে নোয়াখালী থেকে শাহবাগে সর্বক্ষেত্রে অদম্য মনোবলে বিক্ষোভ করে সংহতি প্রকাশ করে।

ফলে  নিষিদ্ধের ঘোষণা প্রকাশের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত সাফল্য দেখে দেশবাসী আনন্দ মিছিলে ছড়িয়ে পড়ে নোবিপ্রবিও এর ব্যতীক্রম নয়। ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিলসহ মিষ্টি বিতরণ কার্যক্রম করে আন্দোলনকারীরা। 

গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট-স্বৈরাচারী সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যফল( নিষিদ্ধ) প্রমাণ করে এই বাংলাদেশে কোনো আধিপত্যবাদ-সন্ত্রাস ছাত্রজনতা মেনে নিবে না তাই অন্যান্য সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি ভবিষ্যতে হুশিয়ার-সাবধান হওয়ার উদাত্ত আহ্বান রইল।