সন্দেহের আগুনে ছারখার সাত পরিবার: পাবনার ভাঙ্গুড়ায় হৃদয়বিদারক মানবিক বিপর্যয়

ভাঙ্গুড়া (পাবনা), ২২ জুন:
একটি হত্যাকাণ্ডের সন্দেহে সাতটি পরিবারকে প্রায় সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে উত্তেজিত জনতা। ভাঙ্গুড়ার বৃদ্ধ মরিচ গ্রামে মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী ওসমান গণি হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন এক ব্যক্তির পরিবারের ১০টি ঘর ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার দুই সপ্তাহ পার হলেও খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।
ঘটনার সূচনা:
গত ৯ জুন রাতে চন্ডিপুর সিকেবি আলিম মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী ও মুয়াজ্জিন ওসমান গণি (৬২) খুন হন। হত্যার পর স্থানীয়রা বৃদ্ধ মরিচ গ্রামের শাহাদত হোসেনকে সন্দেহ করে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরদিন ১০ জুন সকালেই গ্রামে মাইকিং করে শাহাদতের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর উত্তেজিত জনতা হামলা চালিয়ে সাতটি পরিবারের ১০টি ঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।
অথচ পরে ধরা পড়ে আসল আসামি:
ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যেই মূল অভিযুক্ত হিসেবে দুই কিশোর—হাবিব (১৪) ও আহমদ উল্লাহ (১৫)—কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানায়, মাদকের টাকার জন্য ওসমান গণিকে খুন করেছে তারা। সন্দেহভাজন শাহাদত নির্দোষ প্রমাণিত হলেও, ততক্ষণে তার ও পরিবারের ঘরবাড়ি ছারখার।
মানবেতর জীবন ও ক্ষতির চিত্র:
ক্ষতিগ্রস্তদের ভাষায়, “সকালে রান্না শেষ করে খেতেও পারিনি, এরই মধ্যে ১০-১২ জন এসে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করে। ঘরের আসবাব, টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, গবাদি পশু, এমনকি হাঁস-মুরগীও লুট করে। পরে আগুন ধরিয়ে দেয়।”
ঘটনার পরে তারা খোলা আকাশের নিচে জীবন কাটাচ্ছেন। কেউ একজনের বারান্দায় রাত কাটান, কেউ ভাঙা ঘরের সামনে বসে থাকেন।
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ:
প্রায় এক কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে বলে দাবি করেছেন বড় ভাই রবিউল করিম।
পুলিশ ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। মামলা করা হয়েছে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৩০-৩৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া:
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছাঃ নাজমুন নাহার জানিয়েছেন, “ক্ষতিগ্রস্তদের শুকনো খাবার, এক বান্ডিল টিন ও নগদ ৬ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী অর্থবছরে আরও সহযোগিতার চেষ্টা থাকবে।”
ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন:
“শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে আমাদের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দিলে তার দায় কে নেবে?”
“আসল অপরাধী ধরা পড়ার পরও আমাদের জীবনে এই ক্ষতি কে ফিরিয়ে দেবে?”
“আমরা কি কখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব?”
সহযোগিতার আবেদন:
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান ও মানবিক সংগঠনের সহানুভূতি ও সহায়তা চেয়েছে। তাদের একটাই আকুতি—“ঘর না থাকলে গৃহহীন হয়ে মানুষ বাঁচে কিভাবে?”
