জাতীয় নির্বাচনে পিআর পদ্ধতির দাবি ইসলামী আন্দোলন ও জামায়াতের, বিএনপিকেই দোষারোপ ‘সংস্কার বিলম্বে’র জন্য

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের অনুপাতে আসন বণ্টনের (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন– পিআর) পদ্ধতির দাবি জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম (চরমোনাই পীর) বলেছেন, সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় সংস্কারের ‘সুরক্ষা’ নিশ্চিত করতে পিআর পদ্ধতি ছাড়া বিকল্প নেই। এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী, যারা বলছে—রাষ্ট্র সংস্কার ছাড়া তারা কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। একইসঙ্গে বিএনপিকেই তারা দায়ী করেছে রাজনৈতিক ঐকমত্য বিলম্বের জন্য।
গত শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে ইসলামী আন্দোলনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘গণ–অভ্যুত্থানের পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার, গণহত্যার বিচার এবং জাতীয় নির্বাচনের পদ্ধতি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব বক্তব্য উঠে আসে।
সভাপতির বক্তব্যে রেজাউল করিম বলেন, “পিআর পদ্ধতি ছাড়া প্রকৃত গণতন্ত্র সম্ভব নয়। এটি মাদার অব অল রিফর্ম।” বিএনপির পিআর পদ্ধতির সমালোচনার (যে এতে সরকার গঠন স্থিতিশীল হবে না) জবাবে তিনি বলেন, “ইতালিতে বারবার সরকার পরিবর্তন হলেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রয়েছে। বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদে একই দল ক্ষমতায় থেকেও স্থিতিশীলতা আসেনি।”
আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্ব না থাকার সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ একক জাতিগত-ভাষাগত ধারার দেশ। তবুও তুরস্কের মতো বিভাগভিত্তিক নির্বাচন করে ভৌগোলিক প্রতিনিধিত্বও পিআরে নিশ্চিত করা সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “এমপিরা নীতিনির্ধারক, উন্নয়ন তাদের কাজ নয়। উন্নয়নের জন্য স্থানীয় সরকার আছে। পিআরে প্রার্থী না থাকায় কেউ জাল ভোট দিতে মরিয়া হবে না, ফলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।”
চরমোনাই পীর বলেন, “জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিয়েও মতানৈক্য রয়েছে। এখন চাপের মুখে কেউ সংস্কারে সম্মত হলেও পরবর্তীতে তা বজায় রাখবে কিনা, অনিশ্চিত। মাত্র ৪০-৪৯ শতাংশ ভোটে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সংবিধান কাটাছেঁড়ার নজির আছে। পিআর ছাড়া সংস্কার দীর্ঘস্থায়ী হবে না।”
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “একটি দলের (ইঙ্গিত বিএনপি) কারণে ঐকমত্যে পৌঁছানো যাচ্ছে না। তারা বলছে, আমরা পিআর পদ্ধতির কথা বলে নির্বাচন পেছাতে চাই। কিন্তু সত্য হলো, তারাই সংস্কার চায় না। আমরা স্পষ্ট বলছি, সংস্কার না হলে জামায়াত নির্বাচনে যাবে না।”
তিনি আরও বলেন, “ঐকমত্য না এলে নির্বাচন কমিশনের উচিত গণভোটের মাধ্যমে জনমত যাচাই করা।” একইসঙ্গে তিনি পিআর পদ্ধতির পক্ষে থাকা দলগুলো নিয়ে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেন।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় দলবাজি হয়। উচ্চকক্ষে পিআর ব্যবস্থা চালু হলে সংবিধানে নয়–ছয় করে হাত দেওয়া বন্ধ হবে।”
গোলটেবিলে বক্তব্য দেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাদের, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, গণ অধিকার পরিষদের হাবিবুর রহমান, ইসলামি ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন প্রমুখ।