টেক্সাসে ভয়াবহ আকস্মিক বন্যা: ৮২ জনের প্রাণহানি, ৪১ জন নিখোঁজ

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে বন্য আগুন বা দাবানল নয়, বরং ভয়াবহ আকস্মিক বন্যা ব্যাপক প্রাণহানি ঘটিয়েছে। গত ৪ জুলাই ‘আমেরিকা দিবস’ ছুটির দিনে শুরু হয়েছিল এই বন্যা।
আকস্মিক বন্যায় এ পর্যন্ত ৮০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে এখনো আরও বহু মানুষ নিখোঁজ আছেন বলে জানানো হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২৪ শিশুসহ ৬৮ জনই কেরি কাউন্টির।
সেখানে নদী তীরবর্তী এক ক্রিশ্চিয়ান গার্লস ক্যাম্প বন্যার পানিতে ডুবে যায় এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ক্যাম্প মিসটিক নামের ওই ক্যাম্পে থাকা শিশুদের মধ্যে দশটি মেয়ে শিশু ও একজন কাউন্সেলর এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
কর্মকর্তারা বলছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে এটা নিশ্চিত। এদিকে ওই অঞ্চলে আগামী ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরও ঝড়ের পূর্বাভাস আছে এবং এর ফলে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
আকস্মিক বন্যার কারণ ও ভয়াবহতা
গত শুক্রবার ভোর থেকে টেক্সাসের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের পার্বত্য এলাকায় প্রচণ্ড শক্তিশালী ঝড়ের ফলে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় প্রায় ১২ ইঞ্চি (৩০ সেন্টিমিটার) বৃষ্টিপাত হয়। এই পরিমাণ বৃষ্টি কের কাউন্টির গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের এক-তৃতীয়াংশের সমান।
এছাড়া এই অঞ্চলের মাটি শুষ্ক ও কঠিন হওয়ায় বৃষ্টির পানি সহজে মাটিতে শোষিত না হয়ে দ্রুত গড়িয়ে যায়, যা এলাকাটিকে প্রাকৃতিকভাবেই বন্যাপ্রবণ করে তুলেছে। যার কারণে পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির বিশাল স্রোত গুয়াডালুপে নদীতে প্রবেশ করলে মাত্র ৪৫ মিনিটের মধ্যে নদীর পানি ২৬ ফুট (প্রায় ৮ মিটার) বেড়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে আকস্মিক বন্যায় অন্তত ৮২ জনের প্রাণহানি হয়েছে এবং ৪১ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। ছুটির দীর্ঘ সপ্তাহান্তের মাঝামাঝি, যখন অধিকাংশ মানুষ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ক্যাম্পিংয়ে বা অবকাশ যাপনে ব্যস্ত ছিলেন, ঠিক তখনই এই দুর্যোগের আঘাতে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়ে রাজ্যটি।
বন্যায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত হয়েছে কের কাউন্টি, যেখানে ৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২৮ জনই শিশু।
বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গুয়াডালুপে নদীর তীরে অবস্থিত ‘ক্যাম্প মিস্টিক’, একটি খ্রিস্টান গ্রীষ্মকালীন শিবির। সেখানে থাকা অনেক কিশোরী এখনও নিখোঁজ, এবং নিহত শিশুদের মধ্যে ১৬ জনই এই ক্যাম্পের শিক্ষার্থী।
টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট জানিয়েছেন, উদ্ধারকাজে ১৪টি হেলিকপ্টার ও শত শত জরুরি সেবা কর্মী অংশ নিয়েছেন। তিনি জানান, নিখোঁজদের সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।
স্থানীয় হাসপাতাল ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আহতদের চিকিৎসা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত ত্রাণ ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই দুর্যোগকে “মারাত্মক” আখ্যা দিয়ে কের কাউন্টিকে জাতীয় দুর্যোগ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এতে করে কেন্দ্রীয় তহবিল ও সহায়তা দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
টেক্সাস প্রাকৃতিক দুর্যোগের দিক থেকে আগেও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে স্মোকহাউস ক্রিক দাবানল ছিল রাজ্যের ইতিহাসে অন্যতম বড় দাবানল।
ক্ষতিগ্রস্ত জমি: ১০ লাখ একরের বেশি
প্রাণহানি: ২ জন
কারণ: ইউটিলিটি খুঁটির ভেঙে পড়া
গবাদিপশু প্রাণহানি: হাজার হাজার
ঘোষিত দুর্যোগ এলাকা: ৬০টি কাউন্টি
শক্তিশালী বাতাস ও শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে দাবানল ভয়াবহ রূপ নেয়। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এবং বহু মানুষকে সরিয়ে নিতে হয়।
বর্তমানে কোনো বড় দাবানলের আশঙ্কা না থাকলেও বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হঠাৎ নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার পেছনে অতিবৃষ্টির পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও বড় ভূমিকা রাখছে।