সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরল আসিফের প্রাণ: অপূর্ণ রইল স্ত্রী-কন্যার স্বপ্ন

মেয়ের জন্য নতুন জামা আর স্ত্রীর আবদার পূরণ হলোনা। এর আগেই সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরে গেল যুবক আসিফ হোসেনের প্রান । শনিবার (২৮ জুন) ভোরে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। একই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও তিন জন, যাদের সবার বাড়ি যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নওয়াপাড়া ইউনিয়ন সভাপতি পল্লী চিকিৎসক মো. জালাল উদ্দীন (৬৫), তার আপন ভাগ্নে জিল্লুর রহমান (৫৫) এবং ডা. আব্দুল হালিম (৫৫)। একই ইউনিয়নের চারজন বাসিন্দার এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
জানা গেছে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশে যোগ দিতে নিহতরা হামদান এক্সপ্রেসে করে যশোরের নওয়াপাড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। ভোরবেলায় এক্সপ্রেসওয়ের সিংপাড়া-নওয়াপাড়া ও হাসাড়া ব্রিজ-২-এর মধ্যবর্তী স্থানে দ্রুতগতির একটি ট্রাকের ধাক্কায় তাদের বহনকারী বাসটি দুর্ঘটনাকবলিত হয়।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং আহতদের উদ্ধার করে ঢাকায় পাঠায়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজন মারা গেলে মৃতের সংখ্যা ৪ এ দাঁড়ায়। এই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৪ জন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
নিহতদের স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, নিহত জিল্লুর রহমান (৬৫) পেশায় একজন সিমেন্ট-বালুর ব্যবসায়ী ছিলেন। তার দুই ছেলে-মেয়ে রয়েছে। ছেলে আলিফ হোসেনের বয়স ১৫ বছর এবং মেয়ে মধু খাতুন (২৪) বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টেবল পদে নড়াইলে কর্মরত আছেন।
অপরদিকে, নিহত মো. জালাল উদ্দীন (৬৫) ছিলেন একজন পল্লী চিকিৎসক এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নওয়াপাড়া ইউনিয়নের সভাপতি। তিনি দুই ছেলে-মেয়ের জনক। ছেলে রায়হান উদ্দিনের বয়স ২২ বছর এবং মেয়ে ফাতেমা খাতুনের বয়স ২৬ বছর। তার ছোট ভাই মো. মাকসুদুর রহমান জানান, জালাল উদ্দীন সাত ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন।
নিহত আসিফ হোসেন (২৪) পেশায় একজন বাসের হেলপার ছিলেন। কথা ছিল এবারের ট্রিপ শেষ করে তিন বছর বয়সী মেয়ে তোহা ও স্ত্রী আরিফাকে নিয়ে নতুন কাপড় কিনতে যাবেন। কিন্তু তার আগেই তার জীবনপ্রদীপ নিভে গেল। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। স্বামী হারানোর শোকে স্তব্ধ হয়ে আছেন তার স্ত্রী আরিফা খাতুন।
আসিফের শাশুড়ি আর্জিনা বেগম জানিয়েছেন, নিহত আসিফ রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। পরে তার এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে বাসে হেলপার হিসেবে যায়। তিনি বলেন, কে জানতো এভাবে তার মৃত্যু হবে। এখন ছোট নাতি আর মেয়েকে নিয়ে আমি অসহায়ের মতো আছি। এখন কি করবো, এদের জীবনের কি হবে জানি না। এতিম শিশুটির পাশে দাড়ানোর জন্য বিত্তবানদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে নিহত পরিবারগুলোর পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দরা। নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের দলটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশীদ বলেন, সমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে আমাদের সহকর্মীসহ এই ইউনিয়ের দুইজন বাসিন্দা মারা গেছেন। এতে ইউনিয়নজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি প্রত্যকের বাড়িতে গিয়ে খোজখবর নিতে।
তিনি বলেন, জেলার দায়িত্বশীল সকল নেতা এখন ঢাকায় সমাবেশে রয়েছেন। তাদের সাথে আমাদের মুঠোফোনে কথা হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন দায়িত্বশীল নেতাকর্মীরা।
তিনি জানিয়েছেন, এই ইউনিয়ন থেকে প্রায় ৮০ জন কর্মী সমাবেশে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন এবং এই দুর্ঘটনায় নওয়াপাড়া ইউনিয়নের দুই ওয়ার্ড থেকে দুজন ও আড়পাড়া গ্রামের একজন দলীয় কর্মী মারা গেছেন।