বিএনপি নেতাকে এমপি বানিয়ে ঘরে ওঠার ঘোষণা আ.লীগ নেতার, ভিডিও ভাইরাল

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার জামদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আরিফুল ইসলাম তিব্বত প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার টি এস আইয়ুবকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী করে সংসদে পাঠাবেন। তাঁর এ বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয় তোলপাড়। নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম তিব্বত জামদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বাঘারপাড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক। কিন্তু বিএনপি নেতাকে এমপি বানানোর আহ্বান জানানোয় এখন নিজ দলেই তিনি সমালোচিত।
কি বলেছিলেন চেয়ারম্যান তিব্বত সম্প্রতি ৪ ও ৫ এপ্রিল জামদিয়া ইউনিয়নের জয়ারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেওয়া এক বক্তব্যে তিব্বত বলেন,
“বাঘারপাড়া উপজেলার সব ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা টি এস আইয়ুবের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করছেন। আমরা সবাই তাঁর নেতৃত্বে কাজ করব। বাঘারপাড়ার উন্নয়ন ধরে রাখতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁকে নির্বাচিত করে ঘরে উঠব।”
ভিডিওটি শনিবার রাত থেকে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
আওয়ামী লীগের ভেতরে ক্ষোভ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা বলেছেন, দলের প্রতিক্রিয়াশীল সময়েও ত্যাগী কর্মীরা লড়াই করে যাচ্ছেন, সেখানে দলের দায়িত্বশীল একজন নেতা প্রকাশ্যে বিএনপি নেতার পক্ষে প্রচারণা চালানো ‘দলীয় আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।’
দোহাকুলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু মোতালেব তরফদার বলেন, “তিব্বতের বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে, তিনি সুস্থ অবস্থায় ছিলেন না। সামাজিক যোগাযোগ কিংবা একই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মানে এই নয় যে, সব চেয়ারম্যান বিএনপি নেতার পক্ষে কাজ করবেন।”
বন্দবিলা ইউপি চেয়ারম্যান সবদুল হোসেন খান বলেন, “তিব্বতের বক্তব্য তাঁর ব্যক্তিগত মত। বাঘারপাড়ার অন্য ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে এ বক্তব্যের প্রতিবাদ করব।”
বিএনপিতেও বিব্রতকর পরিস্থিতি অন্যদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরাও এ নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন। স্থানীয়দের দাবি, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা টি এস আইয়ুব আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের বিএনপিতে ‘পুনর্বাসন’ করছেন। এতে দলের তৃণমূল নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাই মনা বলেন, “তিব্বতের বক্তব্য তাঁর অনিয়ম ঢাকার জন্য। তিনি আইয়ুবের আশ্রয়ে পরিষদ চালাচ্ছেন। এতে আমরা লজ্জিত। তৃণমূলের অনেক নেতা রাজনীতি থেকে সরে যেতে চাইছেন।”
উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আলম টিপু বলেন, “বিএনপির নেতারা এখন আওয়ামী লীগের নেতাদের পুনর্বাসনে ব্যস্ত। তাই মাঠে বিএনপির পরিচিত নেতারা নয়, বরং অন্য দলীয় ব্যক্তিরাই বেশি সক্রিয় হয়ে উঠছেন।”
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা টি এস আইয়ুবের মোবাইলে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। চেয়ারম্যান তিব্বতের ব্যাখ্যা বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম তিব্বত বলেন, “অনুষ্ঠানের প্রথম দিন বিকেলে একটি তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে গোলযোগ হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতেই আমি এমন বক্তব্য দিয়েছি।”
