‘মব জাস্টিস’ আতঙ্কে দেশ, সরকারের জিরো টলারেন্স ঘোষণা

দেশজুড়ে ‘মব জাস্টিস’ এখন একটি আতঙ্কের নাম। বিশেষ করে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা এই আতঙ্ককে আরও প্রকট করে তুলেছে। ২২ জুন উত্তরা এলাকায় তার বাসভবনে সংঘটিত হয় এক চাঞ্চল্যকর ‘মব জাস্টিস’। কিছু মানুষ তার বাসায় প্রবেশ করে হেনস্তা করে এবং পরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যায় তাকে জুতার মালা পরানো হচ্ছে।
এই ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর প্রতিক্রিয়া এসেছে। প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ জানিয়েছেন, “মব জাস্টিস কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আইন নিজস্ব গতিতেই চলবে এবং দোষীদের শাস্তি হবে। মবের নামে কেউ যেন আইন হাতে তুলে না নেয় – এই ব্যাপারে সরকার জিরো টলারেন্সে আছে।”
রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান
মব কালচারের বিরুদ্ধে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি-ও স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আমরা আইনের শাসনে বিশ্বাস করি। যদি কেউ মব ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে, দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রুহুল কবীর রিজভী মব জাস্টিসের কড়া সমালোচনা করে বলেন, “কে এম নুরুল হুদা নির্বাচনী ফ্যাসিবাদের অংশ হলেও, তার বিচার হওয়া উচিত আইনের মাধ্যমে, মবের হাতে নয়।”
তবে এই পরিস্থিতিতে দায় চাপানো হয়েছে সরকারের দিকেও। গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেছেন, “মবোক্রেসির জন্য দায়ী সরকারের দুর্বলতা। সরকারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতাই এসব ঘটনার উৎস।”
সাবেক আমলারা আতঙ্কে
মব কালচারের সম্প্রসারণে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সাবেক আমলারা। এক সাবেক সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “চাকরি জীবনে সরকারের নির্দেশে কাজ করেছি। আজ অবসরে এসে যদি জনরোষ বা মবের শিকার হতে হয়, তাহলে তো আর সম্মান থাকে না।”
সরকারি দলও ভুক্তভোগী
৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে মব জাস্টিসের শিকার হয়েছেন বহু আওয়ামী লীগ নেতাও। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা আত্মগোপনে আছেন, কেউ দেশে, কেউ বিদেশে। আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, “আমাদের নেতাকর্মীরা যেখানেই ধরা পড়ছে, সেখানেই মব জাস্টিসের শিকার হচ্ছে। এটা দুঃখজনক। বিচার হলে হোক আইনের মাধ্যমে।”
সরকারের অবস্থান স্পষ্ট
সরকারি সূত্র জানায়, মব তৈরি করে আইন হাতে তুলে নেওয়ার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
বিশ্লেষণ:
বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় ‘মব জাস্টিস’ যেন একটি রাজনৈতিক প্রতিশোধের নতুন হাতিয়ার হয়ে উঠছে। যার ফল ভোগ করছেন সাবেক আমলা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের কর্মী পর্যন্ত। এটি কেবল ব্যক্তি অধিকার হরণ নয়, রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ও আইনের শাসনেরও চরম অবমাননা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনের দুর্বল প্রয়োগ, বিচারহীনতা এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার সংস্কৃতি থেকেই এই মব সংস্কৃতির উৎপত্তি। এটি থামাতে হলে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, দ্রুত বিচার, এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ।
