জাতিসংঘ পানি কনভেনশনে যোগ দিল বাংলাদেশ, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম দেশ হিসেবে ইতিহাস গড়লো

দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে জাতিসংঘের আন্তঃসীমান্ত জলপথ ও আন্তর্জাতিক হ্রদ সুরক্ষা এবং ব্যবহার সংক্রান্ত কনভেনশনে (পানি কনভেনশন) আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। সোমবার (২৩ জুন) এ যোগদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় এবং বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের পাঠানো এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
জাতিসংঘ পানি কনভেনশনে বাংলাদেশের এই সংযুক্তি টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা ও আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতায় একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিশ্বের অন্যতম জটিল নদীব্যবস্থার দেশ বাংলাদেশ
বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপের উপর অবস্থিত বাংলাদেশে চীন, ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে আসা ৫৭টি আন্তঃসীমান্ত নদী প্রবাহিত হয়। গঙ্গা (পদ্মা), ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর জটিল নদীব্যবস্থার দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক পানি সহযোগিতা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বন্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার বাংলাদেশ
বাংলাদেশের প্রায় ৬০% মানুষ উচ্চ বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে, যা বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (শুধু নেদারল্যান্ডসের পর)। গড় হিসেবে প্রতি বছর দেশের ২০-২৫% ভূমি বন্যায় প্লাবিত হয় এবং চরম বন্যার সময় এটি ৫৫-৬০% পর্যন্ত বেড়ে যায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গ্রীষ্মে খরা এবং বর্ষায় আকস্মিক ও তীব্র বন্যা পরিস্থিতি এখন আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে।
জাতিসংঘ পানি কনভেনশন কী?
১৯৯২ সালের ১৭ মার্চ গৃহীত এই কনভেনশনের লক্ষ্য হলো আন্তঃসীমান্ত পানি ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশগতভাবে টেকসই সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এটি ২০১৬ সাল থেকে জাতিসংঘের সব সদস্য দেশের জন্য উন্মুক্ত হয়। বর্তমানে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ল্যাটিন আমেরিকা ও এশিয়ার ৫৬টি দেশ এর সদস্য, আরও ২০টির বেশি দেশ যোগদানের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
বাংলাদেশের অংশগ্রহণের তাৎপর্য
বাংলাদেশ ২০১২ সাল থেকেই এই কনভেনশনের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছিল এবং ২০২৪ সালের অক্টোবরে স্লোভেনিয়ায় আয়োজিত ১০ম সভায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে সদস্য হওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পানিনীতিতে নিজেদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সদস্যতা আন্তঃসীমান্ত পানিবণ্টন নিয়ে ভবিষ্যৎ সংলাপে বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর শক্তিশালী করবে এবং পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় আরও বৈশ্বিক সহায়তা পাওয়ার পথ প্রশস্ত করবে।
