কেনিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, নিহত অন্তত ১৬

গত বছরের সরকারবিরোধী আন্দোলনের এক বছরপূর্তিতে কেনিয়ায় ফের রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভ হয়েছে। বুধবার (২৫ জুন) রাজধানী নাইরোবিসহ দেশজুড়ে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামলে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে এই সংঘর্ষে অন্তত ১৬ জন নিহত এবং ৪০০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও কেনিয়া জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। তবে সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ৮ জন।
বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে তার স্টেট হাউসে প্রবেশের চেষ্টা করলে নিরাপত্তা বাহিনী বাধা দেয়। এসময় রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে ব্যারিকেড, কাঁটাতার ও জলকামান মোতায়েন করা হয়।
বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ ও দাবি
বিক্ষোভকারীরা হাতে কেনিয়ার পতাকা ও প্ল্যাকার্ড বহন করছিলেন, যাতে লেখা ছিল “Ruto Must Go”। তারা গত বছর করবৃদ্ধির বিরুদ্ধে নিহত আন্দোলনকারীদের স্মরণ করে শোক ও প্রতিবাদের বার্তা দেয়।
২৪ বছর বয়সী এক নারী ইভ বার্তা সংস্থা AFP-কে বলেন,
“আমি কেনিয়ার একজন তরুণ নাগরিক হিসেবে এখানে প্রতিবাদ করতে এসেছি। আমাদের রক্ষার দায়িত্ব পুলিশের, কিন্তু তারাই আজ আমাদের হত্যা করছে।”
সংঘর্ষ ও সহিংসতা
আল জাজিরা জানিয়েছে, শুধু রাজধানী নাইরোবিই নয়, মাতুউ শহরসহ আরও বেশ কিছু জায়গায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অনেক বিক্ষোভকারী আহত হন, এর মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এছাড়াও সাংবাদিকদের ওপরও হামলার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বলছে, আন্দোলনের কণ্ঠরোধ করতে সরকারি বাহিনী মারাত্মক দমন-পীড়ন চালাচ্ছে।
পটভূমি
২০২৪ সালে করবৃদ্ধির বিরুদ্ধে কেনিয়ার তরুণরা বৃহৎ আন্দোলনে নামে, যেখানে সরকারি বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ৬০ জন নিহত হয়। এরপর থেকেই প্রেসিডেন্ট রুটোর সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রবল হচ্ছে।
মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে বলেছে,
“বিক্ষোভকারীদের প্রতি সহিংসতা অত্যন্ত নিন্দনীয়। মত প্রকাশের অধিকার গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ, অথচ কেনিয়ায় সেটি আবারও ক্ষুণ্ন হলো।”
বিশ্লেষণ: গণতান্ত্রিক অধিকার নাকি নিরাপত্তার অজুহাতে দমন?
বিশ্লেষকরা বলছেন, কেনিয়ার এই পরিস্থিতি কেবল সরকারের বিরুদ্ধে নয়, পুরো ব্যবস্থার প্রতি তরুণ প্রজন্মের অনাস্থার বহিঃপ্রকাশ। সরকার যেখানে ‘নিরাপত্তা’ বজায় রাখার কথা বলছে, সেখানে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এটি ‘দমন-পীড়নের কৌশল’।
