২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কলমবিরতি পালন

সারা দেশে কলমবিরতির প্রথম দিন পালন করেছেন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
২৫টি ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের আহ্বানে আজ মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন দপ্তরে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
দুই দিনের কলমবিরতি কর্মসূচির আজ ছিল প্রথম দিন। আগামীকাল বুধবারও কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিষদের নেতারা।
‘বৈষম্যমূলকভাবে’ প্রশাসন ক্যাডারের বাইরের বিভিন্ন ক্যাডার কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত ও বিভাগীয় মামলার প্রতিবাদে এবং ‘কৃত্য পেশাভিত্তিক’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা, উপসচিব পদে পদোন্নতিতে কোটা বাতিল ও সব ক্যাডারের মধ্যে সমতা আনার দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করছে পরিষদ।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগসহ অন্যান্য জরুরি সেবা কার্যক্রম এই কর্মসূচির আওতাবহির্ভূত বলে পরিষদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
আজ সকাল ১০টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত পরিসংখ্যান ভবনে গিয়ে দেখা যায়, পরিসংখ্যান ক্যাডারের কর্মকর্তারা কলমবিরতি পালন করছেন। সবাই যাঁর যাঁর ডেস্কে বসে আছেন। তবে কেউ কোনো ফাইলে সই করছেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিসংখ্যান ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা কলমবিরতি পালন করছেন। পরিষদের সব ন্যায্য দাবির পক্ষে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে পরিসংখ্যান ক্যাডার একমত। পরিষদ থেকে যে ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে, পরিসংখ্যান ক্যাডারের কর্মকর্তারা তাতে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
তবে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি হওয়ায় আন্দোলনকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে কিছুটা ভয় কাজ করছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, নতুন অধ্যাদেশ জারি হওয়ায় সরকারি কর্মচারীদের সহজে চাকরিচ্যুত করা যাবে।
পরিষদের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরে মারামারি, মিছিল ও জনপ্রশাসনে শোডাউন করে আছেন। সংস্কার কমিশনকে আলটিমেটাম দিয়েছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি শুরু হয়। প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা বাকি ২৫টি ক্যাডারের সদস্যদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। এসব লেখালেখির কারণে ২৫ ক্যাডারের ১২ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বিষয়টি সমাধানের জন্য আশ্বস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টিকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। উপরন্তু সম্প্রতি কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। অথচ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সরকারি বিধিবিধানবহির্ভূত কার্যকলাপের পরও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
পরিষদ বলেছে, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে দুর্নীতিমুক্ত জনসেবা নিশ্চিত করার মতো কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। বরং একটি নির্দিষ্ট ক্যাডারের গোষ্ঠীস্বার্থে পক্ষপাতদুষ্ট জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন উদ্দেশ্যমূলকভাবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিসংখ্যান, ডাক, পরিবার-পরিকল্পনা, কাস্টমস ও ট্যাক্স ক্যাডারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করেছে। সংস্কার কমিশন উপসচিব পুলে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রেখে অন্য ২৫টি ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ পরীক্ষার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করে, যা জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে পরিষদ মনে করে। আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়া এমন সব সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। আগামীকাল পরিষদ দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি পালন করবে।