যে ভাইকে জেল থেকে বের করেছি সে আমার স্ত্রী সন্তানরে মারল

যে ভাইকে জেল থেকে বের করেছি সে আমার স্ত্রী সন্তানের মারল তা আমি মেনে নিতে পারছি না। তারা তো কোন দোষ করেনি। কেন আমাকে নিঃস্ব করে দিলি ভাই? আমি এখন কাদের নিয়ে বাঁচবো। আহাজারি করে কথাগুলো বলছিলেন রফিকুল ইসলাম। সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহের ভালুকা পৌর শহরের পনাশাইল এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে রফিকুল ইসলামের স্ত্রী ময়না আক্তার (২৫), তাদের মেয়ে রাইসা আক্তার (৭) ও ছেলে নীরব হোসেন (২) এর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ভাড়া বাসার দুটি রুমে স্ত্রী সন্তান ও তার ছোট ভাই নজরুল ইসলামকে নিয়ে বসবাস করতেন রফিকুল ইসলাম।
রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ভাই একটি হত্যা মামলার আসামি। তাকে আড়াই মাস আগে ৪০ হাজার টাকা দেনা করে জেল থেকে ছাড়িয়ে এনেছি। তারপর সে আমার সাথেই থেকে অটোরিকশা চালাত। এক রুমের বাসায় থাকতে কষ্ট হত তাই দেড় মাস আগে পনাশাইল এলাকায় দুই রুমের ভাড়া বাসা নেই। এক রুমে আমি পরিবার নিয়ে আর অন্য রুমে সে থাকত। মাঝে মধ্যে খাওয়া দাওয়া নিয়ে আমার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া হত। আর কোন সমস্যা ছিল না। গতকাল রাত আটটার সময় আমি ডিউটিতে চলে যাই, পরে সাড়ে ১০টার দিকে বাসায় কল দিলে ময়নার নাম্বার বন্ধ পাই। তারপর নজরুলের নাম্বার কল দিয়ে ময়নার সাথে কথা বলি। সোমবার সকালে বাসায় এসে দরজা বন্ধ পাই এবং গেট ও তালাবদ্ধ ছিল। পরে বাসার মালিক নিয়ে তালা ভেঙ্গে দেখি তাদের রক্তাক্ত মরদেহ। আমার ভাইকে আর খোঁজে পাইনি। তার মোবাইলও বন্ধ। ভাই এমন করবে জানলে জেল থেকে আমি বের করতাম না। কেন আমার এমন ক্ষতি করলি ভাই।
নিহত ময়নার বোন আছমা আক্তার বলেন, খবর শুনে এসে দেখি আমার বোন ও তার দুই সন্তানের মরদেহ খাটের ওপর পড়ে আছে। আমার বোন জামাই খুবই ভালো মানুষ ৯-১০ বছর আগে তাদের বিয়ে হলেও কোনদিন ঝগড়া হয়নি। নজরুল আমার বোন ভাগ্নে ভাগনিকে মেরেছে। তা না হলে সে পলাতক কেন?
বাসাটির মালিক হৃদয় হাসান হাইয়ুম বলেন, দেড় মাস আগে রফিকুল বাসা ভাড়া নিয়েছে। এক রুমে সে তার পরিবার নিয়ে এবং অন্য রুমে তার ভাই নজরুল ইসলাম থাকত। তবে তাদের মধ্যে কোন মনমালিন্য দেখিনি। কেন এমন ঘটনা ঘটল তাও বলতে পারছি না।
বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ভালুকা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনতোষ সাহা বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জেরেই হত্যাকান্ডটি ঘটে থাকতে পারে। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত ছাড়া এর বেশি কিছু বলা যাবে না। নজরুলকেও ধরার চেষ্টা করছি।
রফিকুল ইসলাম নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার সেনের বাজার গ্রামের সন্তু মিয়ার ছেলে। আর ময়না ভালুকা উপজেলার রাজৈ ইউনিয়নের পায়লাবর চৌরাস্তা গ্রামের আফতাব উদ্দিনের মেয়ে। রফিকুল ইসলাম ভালুকার রাসেল স্পিনিং মিলে শ্রমিকের চাকরি করেন।