‘মুখে সংস্কার, মনে সন্দেহ’— বিএনপিকে তীর ছুঁড়লেন জামায়াত নেতা তাহের

বিএনপিকে ইঙ্গিত করে ‘একটি দল মুখে বলে মানে, কিন্তু আসলে মানে না’— এমন মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, “ঈমানের তিন ধাপ যেমন মুখে স্বীকার, মনে বিশ্বাস, আর কর্মে বাস্তবায়ন— সংস্কারের ক্ষেত্রেও একই ধারা চলে। কিন্তু কিছু দল প্রথম ধাপে আটকে থাকে, দ্বিতীয় ধাপে এগোয় না। তারা কেবল বলে, ‘ক্ষমতায় গেলে করবো। ’ কিন্তু প্রশ্ন হলো— আপনারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন কি করেছিলেন?”
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকালে রাজধানীর মহাখালীতে জামায়াত ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত গণমিছিলোত্তর সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
তাহের বলেন, “সংস্কার যদি সত্যিই মানেন, তাহলে আইনগত ভিত্তি দিতে সমস্যা কোথায়? আইনি ভিত্তির বিপক্ষে থাকলে, স্পষ্ট করে বলুন— কেন? আর ‘পিআর’ বোঝেন না বললে, আসেন বিতর্ক করি, প্রেস ক্লাব বা বায়তুল মোকাররমের সামনে। আপনার মুখ ও মনের মিল আছে কিনা, তা তখনই জনগণ বুঝবে।”
তিনি বলেন, প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন পদ্ধতি (PR) চালুর বিকল্প নেই। তার ভাষায়, “১৯৭৩ সাল থেকে শেখ হাসিনার সর্বশেষ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা বলছে— এটি আর জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করছে না। কেন্দ্র দখল, টাকার খেলা, দিনকে রাত বানানো— এসবই হয়েছে। তাই নতুন পদ্ধতি দরকার, যেখানে জনপ্রিয়তা না থাকলে মাস্তানি করে কেউ জিততে পারবে না।”
তাহের প্রশ্ন রাখেন, “পিআর পদ্ধতিতে যেখানে যে দল যত ভোট পাবে, সেই অনুপাতে আসন পাবে— এটাই তো স্বাভাবিক। কেউ কেউ বলেন, বোঝেন না। আমি বলি, আসেন ক্লাস করি— আমি বিনে পয়সায় পড়িয়ে দেব।”
তাহের বলেন, “যারা পিআর চায় না, তারা জানে তাদের জনপ্রিয়তা নেই। আছে মাস্তান, আছে অবৈধ টাকার পাহাড়। অনেক প্রার্থী নির্বাচনের এক বছর আগেই টাকার ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। তারা জনগণের কাছে নয়, টাকার কাছে যায়। সুতরাং এই পথে নির্বাচন আর চলবে না।”
তিনি স্পষ্ট বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে জামায়াত ইসলামী কখনো আপস করবে না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং টেকসই সমৃদ্ধির জন্য জামায়াতের সংগ্রাম চলবে।”
তাহের অভিযোগ করেন, “আমরা ১৫ বছর নির্যাতিত ছিলাম। সেই অতীত ইতিহাস আজ আর টানতে চাই না। কারণ আমরা নিজেরাই সাক্ষী। আমরা সবাই এই মুক্তিযুদ্ধে শামিল।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। ওটা গনকেস। দিল্লি বহুদূর। জনগণ তাদের চিনে ফেলেছে। আর যারা এখন নতুন স্বৈরাচার হতে চায়, তারাও ইনশাআল্লাহ আসতে পারবে না।”
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, এবং সঞ্চালনা করেন মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন—
কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, ইয়াছিন আরাফাত, জিয়াউল হাসান, জামাল উদ্দিন,
প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার, কর্মপরিষদ সদস্য নাসির উদ্দীন প্রমুখ।